জাতীয়

দেশে হার্টের রিংয়ের বৈষম্যমূলক দাম নিয়ে হাইকোর্টের রুল

হৃদরোগীদের জীবনদায়ী চিকিৎসার সামগ্রী করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম পুননির্ধারণ কেন বৈষম্যমূলক, অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে নতুন দাম নির্ধারণের আদেশ বা সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল জারি করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

হৃদরোগে আক্রান্ত কিছু রোগীর রক্তনালি সরু বা বন্ধ (ব্লক) হয়ে গেলে রক্ত চলাচল সচল রাখতে স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক আদেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করে দেয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফের স্বাক্ষরে দেওয়া আদেশে আমদানি করা টেন্ট প্রতিষ্ঠানভেদে খুচরা মূল্য সর্বনিম্ন ১৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়।

মূল্যসংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ‘ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ এর ধারা ৩০ (১) অনুসারে হার্টের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হলো।

কার্ডিয়াক চিকিৎসা দেওয়া সব হাসপাতালকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে অনুরোধ করা হলো।’

এতে আরো বলা হয়, সব হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে তালিকাটি জনগণের জন্য প্রদর্শন করতে হবে। রিংয়ের নাম, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে পৃথক ক্যাশমেমো দিতে হবে। রোগীকে ব্যবহৃত হার্টের রিংয়ের প্যাকেট সরবরাহ করতে হবে।

প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন, রিংয়ের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, যে দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে, সে দেশের নাম ও ওই দেশের মূল্য উল্লেখ সংবলিত রিং যেন বিশেষজ্ঞরা ব্যবহার করেন, সে নির্দেশনা থাকতে হবে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওশান লাইফ লিমিটেডসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করা হয়। ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্টেন্টের দাম নির্ধারণকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করা হয় রিটে। 

আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমদানীকারক কম্পানিগুলোর সাথে বৈষম্য করা হয়েছে। ২৭টি কম্পানির মধ্যে ২৪টি কম্পানিকে যে দামে টেন্ট বিক্রি করতে বলা হয়েছে, একই টেন্ট তিনটি কম্পানি বিক্রি করবে তার চেয়ে বেশি দামে।

ওই ২৪টি কম্পানিকে যে দামে টেন্ট বিক্রি করতে বলা হয়েছে সে দামে তারা টেন্ট আমদানিই করতে পারবে না। ফলে এ দাম নির্ধারণ বৈষম্যমূলক। এতে দেশে টেন্টের বাজার একচেটিয়াভাবে তিনটি কম্পানির চলে যাবে। আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। চিকিৎসা খরচ বাড়বে।

সরবরাহ ও নির্ধারিত দামে রিং বিক্রি নিশ্চিত করার আহ্বান

এদিকে নির্ধারিত দামে টেন্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সোমবার কমিশনের উপপরিচালক ফারহানা সাঈদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

নির্ধারিত দামে হার্টের রিং সরবরাহ না করার হুমকির কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানি বোস্টন সায়েন্টিফিক লিমিটেডের প্রোমুস প্রিমিয়ার রিং ভারতে যে দামে বিক্র হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বাংলাদেশে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং কয়জন চিকিৎসক মিলে দেশে হার্টের রিংয়ের অনৈতিক বাণিজ্য করছে।

হার্টের রিংয়ের বাণিজ্য নিয়ে দেশে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই সিন্ডিকেট দেশের রিংয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি করছে। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বাঁচার অধিকার ক্ষুন্ন হবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কমিশন মনে করে জনস্বার্থ বিবেচনা, সরকারের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত ও ব্যবসায়িক নৈতিকতার সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন। টেন্ট বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট যাতে জনস্বার্থবিরোধী অবস্থান নিতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

সেই সঙ্গে টেন্ট আমদানিকারক সিন্ডিকেট, অনৈতিক বাণিজ্য এবং অসাধু চিকিৎসকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে বিজ্ঞপ্তি আহ্বান জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker