জাতীয়

বৃষ্টির প্রভাব বাজারে, বেড়েছে সবজির দাম

রাজধানীর বাজারগুলোতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজি দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে পারছেন না। কিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানীর বাজারে সরবরাহ কমে বেড়েছে সবজির দাম।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার চলমান অভিযানে ডিমের পাইকারি বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও খুচরায় দাম সেভাবে কমেনি। নামমাত্র কিছুটা কমিয়ে ডিম বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গত মাসে বন্যা হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের আমদানি কমে যায়। এতে বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

বাজারে সরবরাহের কোনো ঘটতি না থাকলেও অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে রসুনের।

রাজধানীর বাড্ডার বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান বলেন, ‘টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে পারছেন না। এতে পচে যাচ্ছে সবজি। মূলত এসব কারণে পাইকারি বাজারে সবজি আসা কমে গেছে। এখন যেসব জায়গা থেকে সবজি আসছে, তা চড়া দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। এ জন্য বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান কালাচাঁদপুর ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৯০  থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা, কচুমুখী ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০  থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটা ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে এক সপ্তাহে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে কারওয়ান বাজারে সবজির আমদানি কমে গেছে। এতে আমরা চাহিদা মতো সবজি পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি, বাড়তি দাম দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে।’

জোয়ারসাহারা বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তামিম পারভেজের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে কয়েক দফা দাম বাড়েনি। পণ্যের দাম বাড়লে যে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ওপর কেমন চাপ পড়ে, তা বোঝানো কঠিন। এক বছর আগে এক কেজির রুই মাছ কিনতে পারতাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা দিয়ে। ৩৫ থেকে ৪০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ টাকা। আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এখন কিনলাম ৪৫ টাকায়। এভাবে বাজারের প্রতিটা পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ গত দুই বছরে একটি টাকাও আয় বাড়েনি আমার।’

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরেও সবজি, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বাড়তি দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির গতকালের বাজারদরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ২০ শতাংশ, বেগুন ২৫ শতাংশ ও শসা ৩৩ থেকে ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।

খুচরা বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে ফার্মের মুরগির ডিম এখনো প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। 

টিসিবির গতকালের বাজারদরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের দাম ৭ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। দেশি ও আমদানি করা রসুন কেজিতে ১০ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা করা হয়েছে। চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা কমিয়ে খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দুটি পণ্যের নতুন দামই গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়। দাম কার্যকরের চার দিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনো নতুন দামে তেল ও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ বন্ধ, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম কমানো বোতলজাত সয়াবিন তেল ও চিনি বাজারে আসতে আরো কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। এখন আগের কেনা বোতলজাত তেল ও চিনি বিক্রি করছেন তাঁরা।

রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজারের ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহে রসুন ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। তবে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে, এখন ডজন ১৬০ টাকায় বিক্রি করছি। এক হালি ৫৫ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিম ছিল ১৭০ টাকা।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker