ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীতে বসছে ২০টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাট। এসব হাটে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত বেচাকেনা শুরু হয়নি। আজ রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা শুরু হবে।
জমজমাট বেচাকেনার অপেক্ষায় আছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর আফতাবনগরের লোহার ব্রিজ থেকে বটতলা হয়ে তালতলা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। সেখানে বড় করে সাজানো হয়েছে হাটের তোরণ। গতকাল সেই তোরণের নিচ দিয়ে হাটে গরুভর্তি ট্রাক নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
গতকাল আফতাবনগরের পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সিসিটিভি স্থাপনের কাজ করছেন হাট কমিটির লোকজন। তাঁরা জানান, পুরো হাটে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। বটতলায় পৌঁছে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে কোরবানির গরু। প্রথম পৃষ্ঠার পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটে আনা বেশির ভাগ পশু পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও যশোর এলাকার।
এখনো ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা ব্যস্ত গরুর সেবাযত্নে। কেউ পাশে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার হাটে পশুর সংখ্যা কম। দাম বেশি হওয়ায় এবার অনেকে গরু পালন করেনি। আবার হাট জমতেও দেরি হচ্ছে।
তবে আশা, দেরিতে হলেও হাট জমে উঠবে।
১৩টি গরু নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে আফতাবনগর হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আজাদুর রহমান। তিনি জানান, হাটে আনা তাঁর গরুগুলো দুই লাখ টাকার বেশি দামের। এ পর্যন্ত দুটি গরু বিক্রি করেছেন। মনমতো দাম না বলায় বাকি গরু বিক্রি করছেন না। বিক্রি হোক বা না হোক, ঈদের আগের রাতে বাড়ি চলে যাবেন।
গতকাল দক্ষিণ সিটির কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাট ভর্তি পশু থাকলেও বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশ থেকে শুরু করে দেওয়ানবাগ শরিফ হয়ে গোপীবাগের কিছু এলাকাজুড়ে এই হাটের অবস্থান। হাটে প্রবেশের ফটক রাখা হয়েছে কমলাপুর ও মুগদার সংযোগ সড়কে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত ঈদের দু-এক দিন আগে পুরোদমে কোরবানির পশু বিক্রি হবে। এর আগে টুকটাক বিক্রি হয়।
হাট পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক সিরাজ হোসেন বলেন, ‘হাটে পর্যাপ্ত পশু আনা হয়েছে। ঈদের আগের তিন-চার দিন বিক্রি বেশি পরিমাণে হবে বলে আশা করছি। এ বছর ২০ থেকে ২৫টি স্থায়ী হাসিল কাউন্টার এবং পাঁচ থেকে সাতটি অস্থায়ী হাসিল কাউন্টার থাকছে। হাসিল নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির গরু-ছাগল নিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে আব্দুল মান্নানসহ ৩০ খামারি পাঁচটি ট্রাকে ৭৫টি গরু নিয়ে এসেছেন সাঈদনগর হাটে। মান্নান জানান, ৬ নম্বর প্যান্ডেলে তাঁরা স্থান পেয়েছেন। অনেকে হাটে এসে গরু দেখে যাচ্ছে। তবে এখনো কেউ কিনছে না। তাঁদের আনা গরুর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির দাম চার লাখ টাকা।
আরেক ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক। তিনি যশোরের চৌগাছা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। শুকরিয়া অ্যাগ্রো তাঁর ফার্মের নাম। শুক্রবার দুপুরে তিনি হাটে পৌঁছেন। তিনি বলেন, ‘গতবার যে গরু দুই লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার সে রকম গরু ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। আমার কাছে দেশি, নেপালি-দেশি ক্রস ও নেপালি গরু আছে।’
একই হাটে কুষ্টিয়ার ঝাউতলা থেকে মো. হোসেন ১১০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, ঈদের কয়েক মাস আগ থেকে ছাগল কিনে জমিয়ে বাজারে নিয়ে এসেছেন। তাঁর কাছে থাকা সবচেয়ে বড় খাসিটি ‘কালো পাহাড়’। দাম এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এক লাখ থেকে ৩০ হাজার টাকার ছাগলও আছে তাঁর কাছে।