জাতীয়

সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে, ফায়ার সার্ভিস অফিসে হামলা

বাংলাদেশে কাপড়ের অন্যতম প্রধান মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সেটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

তবে পুরোপুরি আগুন নির্বাপন করতে আরো ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

মি. মাইন উদ্দিন বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। আগুন আর ছড়াবে না। নির্বাপনে আনতে সময় লাগবে।”

এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করেছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর দুই শতাধিক কর্মী কাজ করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি, পুলিশ, ওয়াসাও একসাথে কাজ করেছেন।

আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পুরোপুরি তদন্তের পরই আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা যাবে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আট জন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, ২০১৯ সালের ২রা এপ্রিল বঙ্গবাজারের এই ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে। তখন ভবনে একটি ব্যানারও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর পর ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ব্যবসা চলছিল বলে জানান তিনি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়ার জন্য উৎসুক জনতার ভীড়, পানির সংকট এবং বাতাসকে দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মি. মাইন উদ্দিন।

“এক জায়গায় আগুন নেভাচ্ছি, আরেক জায়গায় আগুন লেগে যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

Image
আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে

ফায়ার সার্ভিসের দপ্তরে হামলা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন অভিযোগ করেছেন যে, বঙ্গবাজারের ঠিক বিপরীতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। সদরদপ্তরের গাড়ি ও ভবনে ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আপনাদের পাশে সবার আগে। তারপর আমার উপর কেন আক্রমণ? কেন আঘাত ফায়ারসার্ভিসের উপরে?”

গত এক বছরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন কর্মী নিহত হয়েছে এবং আরো ২৯ জন আহত হয়েছেন।

এরপরেও কেন ফায়ার সার্ভিসের উপর হামলা করা হয়েছে তা তার বোধগম্য নয় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, আগে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে এই আগুন লাগার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক।

মহাপরিচালক জানান, আগুন লাগার পর প্রথমে একটি মোবাইল নম্বর থেকে এবং পরে ৯৯৯ থেকে খবর পান তারা।

Image
কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

কিন্তু কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন সেখানে প্রায় চার হাজারের মতো দোকান আছে।

আগুনের ঘটনা জানার পর ঢাকা এবং আশেপাশের জেলার সবগুলো ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে।

আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনীর ইউনিটও। ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, বঙ্গবাজার এবং আশেপাশের মার্কেটগুলোতেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

মার্কেট ও আশেপাশের এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না।

Image
আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট

আগুন নিয়ন্ত্রণে এখনো পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের মোট ৪১টির বেশি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। মোট ছয়টি দিক থেকে আগুনের উপর পানি ছিটানো হচ্ছে।

তবে আগুনে এখনো পর্যন্ত নিহত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটানো হচ্ছে। পানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে আশেপাশের জলাশয় থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া পাইপ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুর থেকে পানি নেয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যোগ দিয়েছে বিজিবি, সামরিক বাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা।

বঙ্গবাজারের আশেপাশ থেকে উৎসুক মানুষের ভিড় সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। তাদের অবস্থানের কারণে আগুন নেভানোর কাজে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তারা।

Image
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যোগ দিয়েছে বিজিবি, সামরিক বাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা।

তবে বঙ্গবাজারে যেসব ব্যবসায়ীর দোকান ছিল তাদের অনেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছেন। দোকান পুড়ে যাওয়ার কারণে সব হারিয়ে কান্নাকাটি করছেন এদের অনেকেই।

বঙ্গবাজার পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধান ও পরিচিত মার্কেটগুলোর একটি।

গত মাসের সাতই মার্চ ঢাকার সিদ্দিক বাজারে একটি বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছিল।

আবু জাফর নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারে তার দুটো দোকান আছে এবং তিনি সেখানে ২৪ বছর ধরে ব্যবসা করছেন।

Image
এর আগেও বঙ্গবাজারে একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

“ঈদের আগে দোকানে ৪০ লক্ষ টাকার মালামাল তুলেছিলাম। সব শেষ হয়ে গেছে,” আবু জাফর।

আরেকজন ব্যক্তি বলেছেন, তার খালাতো ভাই, মামাতো ভাই- সবার মিলে একশোর বেশি দোকান আছে। এটাই তাদের আয়ের উৎস এবং তাদের পরিবার এই আয়েই চলে।

“দোকান থেকে কিচ্ছু বের করতে পারি নাই। নিঃস্ব হয়ে গেলাম ভাই,” সাংবাদিকদের বলেন সে ব্যবসায়ী।

এর আগেও ঢাকার বঙ্গবাজারে একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker