জাতীয়

সিলেটজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, খাবারের আশায় লাখো বানভাসি

সিলেট জুড়ে ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয়। একটু খাবারের আশায় উদয়াস্ত অপেক্ষা আছে লাখো বানভাসি মানুষের। কিন্তু, চাহিদার তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল।

যতটুকু আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাও ঠিকভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সব চেষ্টা এখন কোনোমতে বানভাসি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার।

সিলেটের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নেয়া বানভাসি মানুষেরাও ভুগছেন খাবারের তীব্র সংকটে। প্রশাসন জানিয়েছে, সোমবার থেকে নগরে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

আবার সিলেট নগরের ভেতরে ব্যক্তি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খাবার বিতরণ করলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা রয়েছেন তীব্র সংকটে।

ক্ষুধার যন্ত্রণা যে কতটা তীব্র তা সিলেটের বন্যা দুর্গত এলাকায় না গেলে বোঝানো কঠিন। ক্ষুদা মেটাতে সব ভয়কে জয় করতেও আগপিছ ভাবছেন না বন্যার্তরা।

বন্যার অথৈ পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় উপেক্ষা করেই একটু চাল-ডালের আশায় বানভাসি মানুষ ত্রাণের আশায় প্রাণান্ত চেষ্টা করতেও পিছ পা হচ্ছেন না।

সিলেট সদর উপজেলার মানসিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া এক বানভাসি জানান, দুদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি তিনি।

আবার দুর্গাকুমার পাঠশালায় আশ্রয় নেয়া আরেক বানভাসি জানালেন, তিন দিনে কোনো সরকারি ত্রাণ পাননি। ব্যক্তি-উদ্যোগে কয়েকজন রান্না করা খাবার দিয়েছেন।

আবার রান্না করা খাবারও রেখে দেয়ার কোন উপায় নেই। একবেলায় খেয়ে ফেলতে হয়। তাই একবেলা খেলে পরের বেলা উপোস থাকতে হচ্ছে অনেককেই।

হাহাকারের এমন ছবি এখন গোটা সিলেট জুড়ে। পানিবন্দি লাখো মানুষ। নৌকা ছাড়া যাদের বাইরে বেরুনোরও উপায় নেই। আনা-খানাতেই কাটছে তাদের একেকটা দিন।

ট্রলার কিংবা স্পিডবোটের শব্দ পেলেই বানভাসি মানুষ ঘরের বাইরে ছুটে আসেন। এই বুঝি ত্রাণ নিয়ে কেউ এলো। বেশিরভাগ দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের সময় কাটছে এভাবেই।

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো পুরো গ্রামই পানির নিচে। ত্রাণ নিয়ে সেনা সদস্যরা পৌঁছাতেই যে যেভাবে পারলেন সেভাবেই ছুটে এলেন।

ত্রাণ নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি অবস্থা। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করলেও খাবারের পানি নেই।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও এখন শিশু খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট। বড়রা খেতে পারলেও চিড়ামুড়ি খেয়ে শিশুদের যেনো দিন আর কাটছেই না।

ত্রাণের পাশাপাশি বানভাসি মানুষের আরেক সংকট চিকিৎসা সেবা না পাওয়া। টুকটাক জ্বর, ঠান্ডা-কাশি ও পানি শোধনের ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

মারাত্মক অসুস্থতায় কাউকে হাসপাতালে নেয়ারও সুযোগ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেশিরভাগ হাসপাতালের আঙ্গিনায় পানি।

আবার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সবখানে পৌঁছাতে পারছেন না সেনা, নৌ কিংবা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। তবে, চেষ্টা করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসার।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, বন্যার্তদের উদ্ধার ও সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেনাবাহিনীও এক্ষেত্রে সহায়তা করছে।

তবে নৌকা সংকট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে প্রশাসনের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই বলে জানান জেলা প্রশাসক।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker