পুরাতন প্রেমিককে ত্যাগ করে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলায় প্রতিশোধ নিতে সাতক্ষীরার তালায় এক কলেজ ছাত্রকে ডেকে এনে মারপিট ও মাথা মুণ্ডন করে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে তালা সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসে এঘটনা ঘটে। সোমবার তালা থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় (২০) তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। সে চলতি বছর জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় কোচিং করছে তন্ময়।
কলেজছাত্র তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান জানান, তার ছেলের সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। আকষ্মিক রোববার দুপুর একটার দিকে তার ছেলের পূর্ব পরিচিত নাহিদ হাসান উৎস নামের একটি ছেলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় তালা কলেজের সামনে। সেখান থেকে ছেলে তন্ময়কে ধরে নিয়ে যায় কলেজের মধ্যে একটি রুমে।
সেখানে নিয়ে তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের উপজেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পেছনের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে. আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪) কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তন্ময়কে মারপিট করার পর মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে।
পরে অভিযুক্তরা তন্ময়ের মায়ের কাছে ফোন করে ছেলেকে মারপিটের চিৎকার শোনায়। সংবাদ পেয়ে আত্মীয়রা গিয়ে তন্ময়কে উদ্ধার করে।
তালা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ হুমায়ূন কবীরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ধরণের কোনো খবর তার জানা নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সাথে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি আকিবের সাথে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। নতুন করে সম্পর্ক গড়ে উঠে তন্ময়ের সাথে। তন্ময়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে আকিব তাকে নাহিদের মাধ্যমে ডেকে এনে মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
ঘটনার মূল অভিযুক্ত আকিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ কর্মী জয় বলেন, তন্ময়কে ডেকে এনে মারপিটের কিছু ঘটনা ঘটেছে। এঘটনা মিটমাট হয়েছে। তবুও পরে তারা মামলা করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন বলেন, সাধারণ ছাত্র বা মানুষের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এমন আচরণ হয়ে থাকলে, তদন্ত করে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জেহাদ আলম ফকরুল খান জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
