জাতীয়

পানিতে দুর্গন্ধ থাকলেও ক্ষতিকর জীবাণু নেই, দাবি ঢাকা ওয়াসার

রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। পান করা দূরের কথা ওয়াসার পানি ব্যবহারের অযোগ্য বলছেন ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে নজিরবিহীন ডায়রিয়া ছড়ানোর জন্য দূষিত পানিকেই দায়ী করছেন সকলে। অথচ সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, দুর্গন্ধযুক্ত হলেও ওয়াসার পানিতে জীবাণু নেই।

এক যুগে পানির দাম তিন গুণ বাড়ালেও এমন ঘোলা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানিই সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। ফিল্টারের স্বচ্ছ পানির পাশে রাখলে পার্থক্যটা আরও স্পষ্ট হয়।

বছরের পর বছর ধরে এমন অপরিষ্কার আর ঝাঁঝালো গন্ধের পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন রাজধানীর ইস্কাটনের বাসিন্দারা। বারবার ওয়াসার হটলাইনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি এলাকাবাসী।

এক বাসিন্দা বলেন, রঙের থেকে বড় সমস্যাটা হচ্ছে পানিতে অত্যন্ত বাজে দুর্গন্ধ। সেটা এতটাই বেশি, শাওয়ার ছেড়ে গোসলও করা যায় না। একদম বমি চলে আসে।

আরেক বাসিন্দা বলেন, কোনো কারণে গলার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে কাঁচা পানিটা, ওজুর সময় যখন গড়গড়া করি তখন পেটে অসুখ হয়ে যাচ্ছিল।

রাজধানীর দক্ষিণখান আর উত্তরখানের অবস্থা আরও করুণ। লাইনে সব সময় পানি আসে না। যা-ও আসে তা আবার ময়লা ও দুর্গন্ধে ভরা। ফলে পানি পান তো দূরের কথা ব্যবহার করাই দায়।

এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকায় পানি নেই। আমরা পানির খুব কষ্টে আছি।

আরেক বাসিন্দা বলেন, পানিতে দুর্গন্ধ। পানিতে ময়লা।

এক রোগীর স্বজন বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার পরে আমার রোগী অজ্ঞান, দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। আমি অন্তত ১০ জন পেয়েছি কলেরা হাসপাতালে, যারা আমার এলাকার পরিচিত।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহম্মদপুর, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার পানির এমন বেহাল দশা। টিআইবির জরিপে দেখা যায়, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হন। সম্প্রতি রাজধানীজুড়ে নজিরবিহীন ডায়রিয়া ছড়ানোর জন্য দূষিত পানিকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও রোগ ছড়ানোর জন্য ওয়াসার পানিকে দায়ী করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডায়রিয়া-কলেরা দেখা দিচ্ছে। এটা পানি দূষণে হচ্ছে। খাবার থেকেও হয়, তবে পানি থেকে এটা বেশি হচ্ছে।

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি রাজধানীতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি ক্ষতিকর নয়।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, পানি একটু ঘোলা থাকে। তবে এতে ক্ষতিকর কিছু নেই। এতে গন্ধটা বেশি ভালো লাগে না। তবে এটা ততটা ক্ষতিকর নয়। খাওয়ার জন্য অবশ্যই এটা না। এটা পরিত্রাণের উপায় আমাদের রোডম্যাপ করা আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেটিতে যেতে পারলাম না।

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কিছু এলাকায় সংকট থাকলেও তা সমাধানে কাজ চলছে বলে জানান সংস্থার এমডি।

শীতলক্ষ্যায় দূষণমুক্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে কিংবা ওয়াসার পাইপলাইনে মেঘনার পানি যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সমস্যার সামাধান দেখছে না ঢাকা ওয়াসা।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker