জাতীয়

অসময়ে তিস্তার পানি বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তায় নদী তীরবর্তী কৃষক

উজান ও ভাটিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অসময়ে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২’শ কিউসেক।

এর আগে ভারত গজলডোবা ব্যারাজ খুলে দেওয়ায় গত ২৫ মার্চ দুপুর থেকে তিস্তা পানি বাড়তে থাকে। রবিবার ভোর থেকে আবার অসময়ে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তিস্তা অববাহিকার শতাধিক চর এলাকার মরিচ, পিয়াজ, আলু, মিষ্টিকুমড়া, গম, তামাক ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের কয়েক হাজার একর ফসল পানিতে ডুবে গেছে।

এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষ পড়েছে দুশ্চিন্তায়। তবে এ পানিতে খুশি হয়েছেন ধান, পাট ও ভুট্টা চাষিরা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্বাভাবিকভাবে এপ্রিল মাসের এ সময় তিস্তা বালুচরে পরিণত থাকে। কিন্তু ভারতে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় পানি কিছুটা বেড়েছে।

পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলেও কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়েছে । তবে এ পানিতে কিছু ফসলের ক্ষতি হবে আবার কিছু ফসলের উপকারে আসবে। তাই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলেও তিনি জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারত পুরো এই শুষ্ক মৌসুমে পানি দিয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কিউসেক। সেচ কাজে ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১১শত কিউসেক। অথচ গত ৭ দিনে ভারত গজলডোবা গেট খুলে দিয়ে ৫ হাজার ২’শ কিউসেক পানি দিয়েছে। অতিরিক্ত পানি আসায় তিস্তার দুইটি গেট খুলে দেওয়ায় কৃষকদের হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে।

তিস্তা চরাঞ্চলের চাষিরা জানান, তিস্তার হিংস্র থাবায় ভিটেমাটি হারা মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার চরাঞ্চলের বালুতে বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা আলু, গম, ভুট্টা, তামাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের ফসল ফলান।

হাড়ভাঙা খাটুনির পর উৎপাদিত ফসল কয়েক দিন বাদে ঘরে তোলার কথা। কিন্তু আকর্ষিক পানিতে তিস্তার নিচু অঞ্চলগুলো ডুবে যায়। ফলে পানিতে ভরে উঠেছে চরাঞ্চলের নালা ও ডোবাগুলো। অন্যদিকে চরাঞ্চলের তুলনামূলক উঁচু জমির ফসলে সেচ-সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা। এসব উঁচু জমির ফসলে কোনোরূপ ক্ষতি হয়নি এ পানিতে। এ কারণে হঠাৎ আসা পানি কোনো চাষির স্বপ্ন কেড়ে নিলেও কাউকে দিয়েছে সাফল্যের সুযোগ। চাষিদের ঘরে হাসি-কান্নার মিলন ঘটিয়েছে অসময়ে তিস্তায় আসা পানি।

শৈলমারী তিস্তাপারের কৃষক সোবাহান মিয়া জানান, তিস্তায় পানি প্রয়োজন। তবে তা হঠাৎ বেশি পরিমাণে দেওয়ায় তাদের এ ক্ষতি হয়েছে। আগাম পূর্বাভাস দিয়ে এ পানি ছেড়ে দিলে ক্ষতি নয়, বড় উপকারে লাগত তাদের। এ পানি শুধু আগাম ভুট্টা ও পাট ক্ষেতের উপকার হয়েছে। বাকি সব ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতির মুখে পড়া আলিম জানান, জমিতে গাজর, পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছেন। হঠাৎ তিস্তার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে তার ক্ষেত। পানি ছেড়ে দেওয়ার খবর আগে জানা গেলে যত কষ্টই হোক, আইল বেঁধে কষ্টে লালিত ফসল রক্ষা করতেন বলেও জানান এ চাষি।

তিস্তার চরে পিয়াজচাষি আলী আকবর বলেন, চৈত্র মাসে হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়েছে। কীভাবে এই পানি তিস্তায় এলো কেউ জানে না। এভাবে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিলে কৃষকের অনেক ক্ষতি হবে। আমার প্রায় এক একর আবাদি পিয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেব চিন্তায় আছি।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, তিস্তায় পানি বাড়ায় কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে এই পানিতে আবার কিছু ফসলের উপকার হয়েছে। যদি কারও ক্ষতি হয়ে থাকে, আবেদন করলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker