কঠোর লকডাউন রাস্তাঘাট ফাঁকা, গাড়ি নিয়ে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী
অনলাইন ডেস্ক:
কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আজ থেকে দেশজুড়ে সাত দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। দুয়েকটা ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ছাড়া তেমন পরিবহন নেই সড়কে। ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকে।
এবারের লকডাউন বাস্তবায়নে ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ের কার্যকর টহল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা জনমানবশূন্য। মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। সেনাবাহিনী গাড়ি রাস্তায় টহল দিতে দেখে গেছে। কোথাও কোথাও কয়েকজনকে দেখা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে ঘরে যেতে বলছেন। এমন কি রিকশা চলাচল করতেও বাধা দিচ্ছেন তারা।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে পরিবহন দেখলেই গতি রোধ করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতে চাচ্ছেন কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাবেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে পারলেই পরিবহনগুলো ছাড়া হচ্ছে চেকপোস্ট থেকে।
উত্তরা আবদুল্লাহপুর এলাকার রিকশাচালক সাদেক বলেন, এতদিন তো রিকশা চালাতে পেরেছি। আজ তো বাস্তায় কোনো মানুষ নেই। কী করে সংসার চালাব। রাস্তাঘাট ফাঁকা। কোনা যাত্রী নেই। সামনের দিনগুলো কেমন চলবে?
এর আগে বুধবার (৩০ জুন) কঠোর বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগের (কভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্নোক্ত শর্তাবলী সংযুক্ত করে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত নিম্নোক্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলো-
২১ দফা নির্দেশনা
১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।