জাতীয়

যারা ত্রুটি নেই বলে লঞ্চটি ছেড়ে দিল, তারা কেন আসামি নয়

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান–১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার দুই আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন নৌ আদালত।

যাঁরা (বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক) লঞ্চে ত্রুটি নেই বলে যাত্রার অনুমতি দিয়েছেন, মামলায় কেন তাঁদের আসামি করা হয়নি, সে প্রশ্ন তোলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামিরা তাঁদের কর্তব্যকাজে অবহেলা করে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক নৌ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন।

টাইটানিক জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজ ত্যাগ করেননি। এই দায়দায়িত্ব তাঁকে (ইনচার্জ মাস্টার) নিতে হবে।

মামলার বাদী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো: শফিকুর রহমান

আজ মঙ্গলবার সকালে নৌ আদালতে অভিযান-১০ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় মাস্টার খলিলুর রহমান আত্মসমর্পণ করেন। আদালতের বিচারক জয়নাব বেগম তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত রোববার দুপুরে নৌআদালত এ সংক্রান্ত মামলা আমলে নিয়ে অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গতকাল লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ গ্রেপ্তার হন।

আসামিদের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মো: জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি আদালতকে বলেন, জামিন পেলে আসামিরা বিচারে অংশগ্রহণ করবেন এবং পলাতক হবেন না। আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘যারা (বিআইডব্লিউটিএ পরিদর্শক) লঞ্চে ত্রুটি নেই বলে ভয়েজ ডিক্লারেশন (যাত্রার অনুমতি) দিয়েছে, তাদের মামলায় আসামি করা হয়নি। অনুমতি না দিলে লঞ্চ যেতে পারত না। অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুনের সূত্রের কাছে মাস্টাররা ছিলেন না। তা ছাড়া ঘটনার পর লঞ্চকে কিনারে ভিড়িয়ে অনেক যাত্রীর জীবন বাঁচিয়েছেন। তবে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে রায় মেনে নেবে আসামিরা।’

ওনার (ইনচার্জ মাস্টার) দায় আছে কি না, সেটা পরের বিষয়। যদি আমার পোস্টিং বরগুনায় হতো, তাহলে আমিও এই লঞ্চের যাত্রী হতে পারতাম। আমাদের কি ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই?

বিচারক জয়নাব বেগম জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রসিকিউটিং অফিসার বেল্লাল হোসাইন বলেন, আসামিরা তাঁদের কর্তব্যকাজে চরম অবহেলা করে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও কলঙ্কজনক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। আসামিরা যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে জাহাজ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁরা কোনো জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহার করেননি। অগ্নিকাণ্ডের পর জাহাজ তীরে না ভিড়িয়ে চালু রেখে চরম অবহেলা প্রদর্শন করে এই ট্র্যাজেডি ঘটান। এই ঘটনায় ৪২টি তাজা প্রাণ পুড়ে ছাই হয়েছে।

এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন মামলার বাদী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো: শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ইনচার্জ মাস্টার পুরো লঞ্চের দায়িত্বে থাকেন। ফলে সব দায় তাঁর।

বিচারক বলেন, ‘ইনচার্জ মাস্টারের দায় আছে কি, না সেটা পরের বিষয়। যদি আমার পোস্টিং বরগুনায় হতো, তাহলে আমিও এই লঞ্চের যাত্রী হতে পারতাম। আমাদের কি ন্যূনতম দায়িত্ববোধ নেই?’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে লঞ্চ ত্যাগ করেছেন।

মামলার বাদী নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক বলেন, টাইটানিক জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজ ত্যাগ করেননি। এই দায়দায়িত্ব তাঁকে (ইনচার্জ মাস্টার) নিতে হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, যারা (বিআইডব্লিটিএ) তাদের (লঞ্চটিকে) ছাড় দিয়েছে, তাদের নাম মামলায় নেই।

মামলার বাদী প্রধান পরিদর্শক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তদন্ত হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, লঞ্চের কর্মীদের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ নেই।

এ সময় প্রধান পরিদর্শক আদালতকে বলেন, ‘আমরা সদরঘাটে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিই। (লঞ্চের কর্মীদের জন্য এ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নৌপরিবহন অধিদপ্তর করে না)।

বিচারক আসামিপক্ষের আইনজীবীকে বলেন, আাসামিদের যদি মনে হয় যে তারা কোনো সরকারি কর্মকর্তার জন্য ভিকটিমাইজড হয়েছে, সে বিষয়ে পরে তাদের বলার সুযোগ রয়েছে। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও প্রধান পরিদর্শককে মামলার তদন্তে আসামিদের যাতে সাক্ষী হিসেবে না রাখা হয়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেন।

বিচারক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন যেন দায়সারা না হয়। পানির মধ্যে পুড়ে মানুষ মারা যাবে, এটা তো কল্পনার বাইরের বিষয়। একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। এখন ভাবার সময় এসেছে ইঞ্জিনকক্ষের পাশ থেকে রান্নাঘর সরিয়ে ফেলা যায় কি না।

এ সময় অভিযান-১০ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার রিয়াজ সিকদার কথা বলতে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি আদালতের বিচারক জয়নাব বেগম।

বাদীর বক্তব্য ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে আাসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker