জাতীয়

যার কারণে চিরকুমার ছিলেন জয়নাল হাজারী, কে সেই বিজু?

বিজুর বিচার চাই। খুবই আলোচিত সংলাপ। এই সংলাপের নিশ্চয়ই কারণ আছে। বিজুর গল্প অভিনেতা স্বাধীন খসরুকে শুনিয়েছিলেন জয়নাল হাজারী। প্রয়াণের দিনে এসব কথাই স্মরণ করলেন অভিনেতা। 

তার লেখাটি হুবহু এখানে দেওয়া হলো- ‘মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে ছিলেন পাক হানাদার বাহিনীর সাক্ষাৎ যম। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী তিনি ছিলেন রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের যম। বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী ছিলেন একজন বহুল আলোচিত, সমালোচিত দেশপ্রেমিক এক সাহসী রহস্যময় পুরুষ। ইতিহাস, ধর্ম, সাহিত্য বা বিশ্বের যেকোনো বিল্পবী নেতাদের সম্পর্কে তিনি ছিলেন জ্ঞানগর্ভ।’

‘আমার সাথে পরিচয় তাঁর এক ভাগ্নে মগবাজারের মানিকের মাধ‍্যমে। আমিও মামা বলে ডাকতাম। একবার ফেনীতে তাঁর বাসার (রীতিমতো একটি প্রাসাদ) সামনে গিয়ে ফোন করে জানালাম যে আমি তার বাসার গেটে আছি। সাথে সাথে তিনি ব‍্যস্ত হয়ে পড়লেন, কেয়ারটেকার লিটনকে ফোন করে বললেন গেট খুলে গেস্টরুমে নিয়ে যেতে। বলে দিলেন বাসায় খাওয়ার কী ব‍্যবস্থা, বাইরে কিংবা কোথায় খাব- এ সব কিছু। আমাকে মোটামুটি মৃদু ধমকের সুরে বললেন, তুমি জানো আমি এখন ঢাকাতে থাকি। মানিক ছিল আমার সাথে, জোরেশোরেই ধমক দিলেন মানিককে, ওনাকে না জানিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য। বলে রাখলেন- প্রয়োজনে যেকোনো কিছু ঢাকা থেকেও পাঠাতে সমস্যা হবে না।’

‘শেষের দিকে উনি ঢাকার ধানমণ্ডি ১৩-তে থাকতেন। তাঁর সম্পাদনায় দৈনিক হাজারীকা নামে একটি দৈনিক পত্রিকা বের হতো। পত্রিকা অফিস ছিল তাঁর অফিস কাম বাসা। অনেকবার গিয়েছি অফিসে এমনিতে, আবার অনেকবার উনি ফোন করে বলতেন, স্বাধীন চলে আস। মানিককে ফোন করে বলতেন, মানিক্কা স্বাধীনকে নিয়ে আয়। আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর জ্ঞানগর্ভ গল্প শুনতাম। আড্ডা চলতো, সাথে খাওয়াদাওয়া।’

‘তাঁর লেখা কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমাকে বইগুলো দিয়ে বলেছিলেন, তোমাকে আমার বই শেলফে রাখার জন‍্য দিচ্ছি না, দিচ্ছি পড়ার জন‍্য। একটা বই ছিল ‘বিজুর বিচার চাই’। পরেরবার যখন আবার বসি, আমি জিজ্ঞেস করলাম- মামা বিজু কে? উনি কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- এ গল্প নিয়ে সিনেমা বানানো যায় কি না?’

‘বললাম, মামা যাবে না কেন, অবশ্যই যাবে। আবারও জানতে চাইলাম, মামা বিজু কে? কিছুক্ষণের নীরবতা শেষে জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে বিজুর সাথে কথা ছিল- যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে মহা ধুমধামে বিজুকে বিয়ে করবেন। যুদ্ধ চলাকালীন জানতে পারেন, জোর করে কোনো এক রাজাকারের সাথে বিজুর বিয়ে দেওয়া হয়েছে! প্রতিজ্ঞা করেন, যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ওই রাজাকারকে প্রথম খুন করবেন। দেশ স্বাধীন হয়, ফিরে আসেন। ফিরে এসে জানতে পারেন, জোর করে বিজুকে বিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজু তার নিজ ইচ্ছায় স্থানীয় এক কলেজের প্রিন্সিপালকে বিয়ে করেছে। জানার পর চুপ হয়ে যান। সারা জীবন চিরকুমার থেকে যান, তিনি আর বিয়ে করেননি। আর এই গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর আসল কারণ মানুষের কৌতূহল, তিনি কেন বিয়ে করেননি জানাতে।’

‘তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আফসোস করে বললেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায়, ততবারই তিনি সংসদ সদস্য নন, মানে নমিনেশন দেওয়া হয়নি তাঁকে। তিনবারই তিনি বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি আগের মতো সরব না, নীরব কেন। বললেন- আমার নেত্রী আমাকে নীরব থাকতে বলেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করেন।’

‘আজ তিনি সব মায়া ত‍্যাগ করে চলে গেছেন! আত্মার শান্তি প্রার্থনা মামা। ওপারে ভালো থাকুন। আপনার কর্ম, স্মৃতির প্রতি যথেষ্ট সম্মান।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker