কিশোরগঞ্জজাতীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান মৃত্যুপথ যাত্রী, খোঁজ নিচ্ছেনা কেউ

একাত্তরের রনাঙ্গনের বীর মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল মন্নান। তিনি ’৭১ এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, বাঙ্গালী জাতীর অস্তিত্ব রক্ষায়। নয়- নয়টি মাস বিরামহীন যুদ্ধের পর নতুন সূর্য এনে দিয়েছেন বাংলার আকাশে। সেই বীর সেনাদের একজন, আব্দুল মন্নান আজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন, দেখতে আসেনি  কেউ।

মা- বোনদের পবিত্র সম্ভ্রম হারানো আর্তচিৎকার, স্বজন হারা মানুষের আহাজারি, রাজাকার বাহিনীর নির্মম বেইমানি, পাকিস্তানি হানাদারদের পৈশাচিক, অমানবিক, হায়েনা থাবা নিরীহ ঘুমন্ত জাতীর উপর, শ্যামল বাংলার সোনার মানুষেরা ভুলেনি ভুলবেনা কখনো।ভুলার মত নয়, এমন সময়কাল আকাশে বাতাশে লাশের গন্ধ, নিরীহ মানুষের কলিজা ফাটা আতংক, রক্তে লালচে মৃত্তিকা, বৃক্ষরাজী।বুলেটের আঘাত পত্র- পল্লব বিহীন গাছ, খরস্রোতা নদীতে জাগবাধাঁ লাশের সারি, বোমা বারুদের বিছানীতে চারদিকে প্রকৃতির ধোঁয়াটে করুন সাজ। বলা যায় সংগ্রাম কালীন নয়টি মাসের পুরো বিষয় আলোকপাত করলে হয়ত কেটে যাবে কোটি বছর।

প্রতি মিলি সেকেন্ডের পরতে পরতে হাজারো অজানা গল্প। রূপসী বাংলার সোনার মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে, অগণিত ক্ষতির মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনে মায়ের হাসি, উদয় হয় একটি নতুন সূর্য বাংলার আকাশে। সেই দামাল সোনার ছেলেদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের চরকাটিহারী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মন্নান একজন।

সিদলা ইউনিয়নের নতুন সড়ক বাজার থেকে চরের দিকে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে কিছু দূর গিয়েই, রাস্তার ডান পাশে ব্রহ্মপুত্র শাখা ছোট্ট নদীর ধারে ফাঁকা মাঠে একটি কুঠির বিশিষ্ট বাড়ী। যায়গাটিকে তিন গ্রামের সংযোগস্থলও বলা চলে, গড় মাসুয়া, চরকাটী হারী ও সাহেবের চর।

জানা যায়, তাহার পিতার নাম হরমুজ আলী (বাবুর বাপ) বাবুর বাপের সাত ছেলের মাঝে সবার বড় আব্দুল মন্নান। এক সন্তান ও স্ত্রী ঘরে রেখেই নাম লিখান মুক্তি বাহিনীতে। কমান্ডার জামাল উদ্দীনের আন্ডারে ইকো ওয়ান সেক্টরের আওতায় টীম কমান্ডার রহিম উদ্দীনের নির্দেশনায় যুদ্ধ করেন। তাহার সহযোদ্ধারা ছিলেন, আব্দুল খালেক, নাজিম উদ্দীন, শামসুল হক, আদম সফি, মোকলেসুর রহমান, আবু- কালাম, আব্দুর রাসিদসহ আরো অনেকে। আমরা গত সেপ্টেম্বরে উনার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখেছিলাম তিনি কিছুটা অসুস্থ। তবু মিশন ৯০ কে তার অভিজ্ঞতার কথা, মনোলোভা সংগ্রামী চেতনার কথা বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু আজ (২৪ নভেম্বর ২১) বুধবার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান বিছানায় পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন, উঠতে বসতে পারেন না অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত সমস্যায়। তিনি একদম মিশে গেছেন বিছানার সাথে। খেতে পারেন না কোনকিছু খাবার ইচ্ছা জানতে চাইলে তিনি আস্তে করে বললেন আঙ্গুর ফল খেতে মন চাচ্ছে খুব বেশি অর্থাভাবে সম্ভব হচ্ছে না।

ভিডিওসহ দেখুন: বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নানকে নিয়ে মিশন নাইনটির প্রতিবেদন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার সংসার চলে  মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়ে। ঔষধপাতির যোগান সেখান থেকেই। এসব আমাদের বলেন তার স্ত্রী জহুরা খাতুন ও নাতী আসিফ (নবম শ্রেণি পড়ুয়া)।

রনাঙ্গন ঝাপিয়ে বেড়ানো মুক্তি সেনা, আজ বন্ধি বাঘের মত ঘরকোণে নিস্তেজ হয়ে বিছানায়, তাকে দেখতে আসেনি কেউ। তার নাতি আসিফ আরো বলেন, দাদা অসুস্থ এটা সম্ভবত কেউ জানেনা। আবার বলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন আগে উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল থেকে কেউ একজন এসেছিলেন কাগজপত্র নিয়ে গেছেন কিন্তু এখনো সহযোগীতার হদিস মিলেনী।

এমন গর্বিত সন্তানের সার্বিক খেয়াল রাখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ এলাকাবাসী তথা পরিচিত জনদের।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker