জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার সময় এসেছে : সিপিডি
সিপিডি জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ৯ মাস পার করায় এখন সিপিডি নির্বাচন তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ৯ মাস পার হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার। আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা সভায় এই দাবি জানানো হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন প্রশ্নে বলতে হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের ইতোমধ্যে ৯ মাস চলে গেছে। এখন নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট ডেট দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে। সেটা ডিসেম্বর হোক বা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ যেটাই হোক। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট ডেট ঘোষণার সময় এসে গেছে।’ তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে সিপিডি দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির উপর জোর দিয়েছে। একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলে তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অর্থনৈতিক প্রভাব:
- বিনিয়োগ হ্রাস: স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না।
- কর্মসংস্থান সংকট: বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি হবে না।
- দারিদ্র্য বৃদ্ধি: বিদ্যমান কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে, ফলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়বে।
- দুষ্টচক্র: এটি অর্থনীতির জন্য একটি দুষ্টচক্রের মতো কাজ করবে।
- ব্যবসায়ীদের অনীহা: ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অস্থিতিশীলতা পছন্দ করেন না।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে। এর ফলে ফরমাল ও ইনফরমাল উভয় খাতেই বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে, যা দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বাড়িয়ে দেবে। তিনি এই প্রক্রিয়াকে একটি ‘দুষ্টচক্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তার মতে, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি, অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অস্থিতিশীলতা পছন্দ করেন না এবং এমন পরিবেশে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন না।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে সম্মেলন করে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানলেও বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগের এই অনিশ্চয়তা কাটবে না। তবে, তিনি এও উল্লেখ করেন যে, নির্বাচন যে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত তা নয়। সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে, অর্থাৎ এখন থেকে ৯ মাস বা ১৫ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, নির্বাচন হয়ে গেলেই বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধির জগতে প্রবেশ করবে, তা কেউ বলছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু নির্বাচনের অপেক্ষা না করে কিছু জরুরি সংস্কার অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। যেমন, গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে বিনিয়োগ হচ্ছে না, যা দূর করতে বাপেক্সকে শক্তিশালী করা এবং লজিস্টিক পলিসি বাস্তবায়ন করা জরুরি। এছাড়াও, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো কার্যকর করা দরকার। তিনি সতর্ক করে দেন যে, এই মৌলিক সমস্যাগুলো এখন সমাধান না করলে নির্বাচনের পরেও বিনিয়োগকারীদের সংকট দূর করা যাবে না।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়েও সিপিডি তাদের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেছে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যদিও বাজেটে এর বিধান থাকতে পারে, এই ধরনের পদক্ষেপ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং রাজনৈতিকভাবে সমস্যাযুক্ত। সিপিডির এই মতামত কালো টাকা সাদা করার উদ্যোগের নৈতিক ও অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।