জাতীয়

রাষ্ট্র অনেক জটিল জায়গা, মনে হয় ছেড়ে দিয়ে চলে যাই রাজপথে: আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে রাষ্ট্রের জটিলতা, সরকারে থাকার চ্যালেঞ্জ, জুলাই আন্দোলনের দায়বদ্ধতা এবং রাজপথে ফেরার ইচ্ছার কথা বলেছেন।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মনে করেন, রাষ্ট্র একটি অত্যন্ত জটিল জায়গা এবং মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে রাজপথে ফিরে যেতে, যেখানে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এই মনোভাব ব্যক্ত করেন।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার পোস্টে লিখেছেন,

“স্বাধীনতা অর্জনের থেকে রক্ষা করা কঠিন। এর চেয়ে কঠিন সত্য আর নেই। লড়াই যেন থামছেই না। রাজপথের লড়াইটা সামষ্টিক, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের মিলনস্থলে পরিণত হওয়ায় এক ধরনের ভালো লাগার জায়গাও তৈরি করে।”

তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দিয়ে চলে যাই রাজপথে। সেটাই আমার জায়গা, যা করতে অভ্যস্ত এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।”

উপদেষ্টা পদের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে আসিফ মাহমুদ জানান, এই অবস্থানে থাকাটা তার কাছে “দো-ধারি তলোয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার মতো হয়ে গেছে।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, সরকার কোনো ভুল করলে সেটি তার এখতিয়ারের বাইরে হলেও জনসমক্ষে তাদের দুজনকে (সম্ভবত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য) কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতা যখন রাজপথে নামে, তখন রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রগুলো তাদের সন্দেহের চোখে দেখে এবং টার্গেট করে, মনে করে যে তারাই এসব করাচ্ছেন। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ইস্যুতে ক্ষমতার বিভিন্ন ভরকেন্দ্রের সাথে আপস না করার কারণে তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হওয়াটাকে তিনি ‘বোনাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও বলেন,

“রাষ্ট্র অনেক বড় এবং জটিল জায়গা। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন।”

তবে এই চ্যালেঞ্জের মাঝেও স্বস্তির দিক হলো, উপদেষ্টা পরিষদ অনেক বাধা সত্ত্বেও দিনশেষে ছাত্র-জনতার পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে এবং জনরায়ের বাস্তবায়ন করতে পারছে। আসিফ মাহমুদ বলেন, “যত দিন পারবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকবে, গণ-অভ্যুত্থানের ভয়েসের যথাযথ গুরুত্ব এই উপদেষ্টা পরিষদ দেবে তত দিনই আছি। গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের পক্ষ থেকে সরে গেলে আমার আর এখানে কাজ নেই।”

সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে তিনি “জুলাই জনতার আরেকটি বিজয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে যারা আওয়ামী সিম্প্যাথাইজার আছেন, তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে একটু অসতর্কতা তাদের পতনের কারণ হতে পারে এবং জুলাইকে মেনে না নিয়ে বাংলাদেশে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ফটোকার্ড ছড়িয়েছে যেখানে উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে (মাহফুজ ভাই) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এমন দেখানো হচ্ছে। তিনি এই ধরনের মিথ্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানান। আসিফ মাহমুদ স্পষ্ট করে বলেন, “আপনার সাথে কারো চিন্তাগত পার্থক্য থাকতেই পারে, সেটাকে নোংরা মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। মাহফুজ ভাই প্রথম থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এবং এর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা কী হতে পারে তা নিয়ে আরগুমেন্ট করেছেন। (ডিটেইলসে গেলে গোপনীয়তার শপথ ভঙ্গ হবে বিধায় এটুকুই থাক)।”

এই পোস্টে আসিফ মাহমুদ তার বর্তমান অবস্থান, রাষ্ট্রের বাস্তবতা, জুলাই আন্দোলনের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং কিছু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তার ভাবনা তুলে ধরেছেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker