জাতীয়

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে শিগগিরই ৭৯০০ কোটি টাকার চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল আকাক্সিক্ষত বে-টার্মিনাল। প্রায় এক যুগ ধরে আলোচনা চললেও দৃশ্যমান অগ্রগতি ছিল সামান্যই। ভূমি বুঝে পাওয়া ছাড়া পুরো প্রকল্প সীমাবদ্ধ ছিল কাগজে-কলমে। তবে এবার আশার আলো জেগেছে।

গত রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অবকাঠামো উন্নয়নে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা অনুমোদনের পর এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে শিগিগিরই ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৭৯০০ কোটি টাকা) ঋণচুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। চলতি এপ্রিল মাসের যে কোনো সময় চুক্তিটি হয়ে যেতে পারে।

এর পরই চ্যানেল তৈরি ও ব্রেকওয়াটার নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আগেই বে-টার্মিনালের চ্যানেল ও ব্রেক ওয়াটার তৈরি করতে ৬৫ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। একনেকে প্রকল্পের জন্য অর্থ অনুমোদন দেওয়ায়  চুক্তির বাধা কাটল। এখন যে কোনো সময় সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে বিশ্বব্যাংকের।

আজও (বুধবার) সেটা হতে পারে। চুক্তিটি হয়ে গেলে ঠিকাদার নিয়োগসহ অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরুর বিষয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।’ বে-টার্মিনাল প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘আমরা আনন্দিত। বে-টার্মিনাল দীর্ঘদিনের দাবি। এত দিন স্বপ্ন ছিল। এখন বাস্তবায়নের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন।

আমরা ব্যবসায়ীরা চাই এ প্রকল্প যেন সঠিক সময়ে শেষ হয়। বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক বন্দরের মতো এটাকে প্রযুক্তিনির্ভর ও টেকসই হিসেবে গড়ে তোলা হোক। যাতে আগামী ১০০ বছর  আর আমাদের নতুন কোনো বন্দরের প্রয়োজন না হয়। একই সঙ্গে নির্মাণকাজ হতে হবে দুর্নীতিমুক্ত। কারণ এর আগের অনেক প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির কথা শোনা গিয়েছিল।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিংয়ের মাধ্যমে একটি কৌশলগত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। ওই প্ল্যানে বে-টার্মিনাল  প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। নগরীর হালিশহর-পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় নির্মিত হবে বে-টার্মিনাল।

এখানে ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং প্রতিটি ১ হাজার ১২৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল থাকবে। দুটি কনটেইনার টার্মিনালের একটি পিপিপির আওতায় পোর্ট অব সিঙ্গাপুর ও অন্যটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ করার কথা।

এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে। প্রকল্পে বন্দরের বিনিয়োগ থাকবে ৪ হাজার কোটি টাকা।

বে-টার্মিনাল হবে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড়। উপকূলের প্রায় ৯০০ একর ভূমি ছাড়াও সাগর থেকে ১ হাজার ৬০০ একর ভূমি রিক্লেইম করার কথা রয়েছে। প্রস্তাবিত ভূমির মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর আগেই বুঝে পেয়েছিল বন্দর। ৫০০ একর সরকারি খাস জমি কিছুদিন আগে বন্দরের অনুকূলে বন্দোবস্তি দেওয়া হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker