জাতীয়

বকশীগঞ্জে ঘুষ ছাড়া মেলে না ভূমিসেবা, ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তাকে বদলি

জামালপুরের বকশীগঞ্জে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়গুলো। টাকা ছাড়া মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। ভূমি কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ মানুষ যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

এসব ঘটনায় বগারচর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ ভূমি সেবা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি মৌজার জন্য ৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস রয়েছে। সরকার ভূমি সেবাকে সহজিকরণ ও ডিজিটালাইজেশন করেছে। কিন্তু এই উপজেলায় ডিজিটালাইজেশনের নামে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও সেবাগ্রহীতারা।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতাদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা। নিরুপায় হয়ে ঝামেলামুক্ত থাকার জন্য কর্মকর্তাদের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।

বকশীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একই চিত্র। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না এসব অফিসের কর্তাদের। ভুলিয়ে-ভালিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে হাতিয়ে নেওয়া হয় এসব অর্থকড়ি। টাকা না দিলেই বিভিন্ন ভুল ও কারণ বের করে নামজারি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব সেবাগ্রহীতাদের।

সম্প্রতি বগারচর ইউনিয়নের এক ব্যক্তির কাছে নামজারির জন্য ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে এমন একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন এক গণমাধ্যমকর্মী। ভিডিওতে দেখা যায়, বগারচর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নিকট নামজারির কথা বলে দুই ধাপে ১২ হাজার নিয়েছেন। যেটা ওই গণমাধ্যমকর্মীর সাথে আলাপকালে ভুক্তভোগী স্বীকার করেছেন।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বগারচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব সাজ্জাত হোসেনকে দেওয়ানগঞ্জে বদলি করা হয়। এ খবর শুনে বুধবার (৯ এপ্রিল) সেবাগ্রহীতাদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে।

নায়েব সাজ্জাত হোসেনকে নামজারির জন্য টাকা দিয়েও নামজারি করতে না পারা এক ভুক্তভোগী নারী জানান, ‘নামজারির জন্য নায়েব সাজ্জাত হোসেন অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন, কিন্তু কাজ না করে টালবাহানা করেন। আজ শুনি, তিনি বদলি হয়ে চলে গেছেন।’

বগারচর ইউনিয়নের ঘাসিরপাড়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি জমির নামজারির জন্য গেলে বগারচরের নায়েব বকশীগঞ্জ এসিল্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরে নামজারি না করে ১ হাজার ৪৬০ টাকার দাখিলা কেটে দেন। বাকি টাকা ফেরত চাইলেও তিনি তা ফেরত দেননি। ওই ভুক্তভোগী এর বিচার দাবি করেছেন।

এছাড়াও ৭টি ভূমি অফিসেই চলে অর্থ লেনদেনের রমরমা কারবার। ভূমি কর্মকর্তাদের মনমতো টাকা না দিলেই নামজারি তো দূরের কথা, উল্টো তাদের জমিই অন্যের নামে নামজারি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব নিয়ে কিছু বলতে গেলেই উল্টো জমি হারানোর শঙ্কা থাকে। তাই ভূমি কর্মকর্তাদের ঘুষের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। ঘুষ লেনদেনের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে বগারচর ইউনিয়নের নায়েব সাজ্জাত হোসেকে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা উল হুসনা জানান, ‘বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ইতোমধ্যে বগারচর ইউনিয়নের নায়েবকে বদলি করা হয়েছে।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker