আন্তর্জাতিক

নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পাল্টে যেতে পারে গোটা যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি। আর সেটি সন্দেহাতীতভাবে খারাপের দিকের এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে রাশিয়া এখন আগের চেয়ে আগ্রাসী হবে আর ইউক্রেন এরিমধ্যে যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট মনোবল অর্জন করে ফেলেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর সোমবার, দেশটির সামরিক, যোগাযোগ ও জ্বালানি স্থাপনায় ব্যাপক আকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রতিশোধ নিতেই এসব হামলা বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছের রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। সামনে আরও হামলা আসছে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন রাশিয়ার শীর্ষ নেতারা।

অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্তি পাল্টা হুশিয়ারী দিয়েছেন, তার দেশের মাটি রুশ সেনাদের জন্য হবে নরকের আগুন। ইউক্রেনের সেনারা সেই নরক তৈরির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। সামনের সময়গুলোতে রাশিয়া কঠিন প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবেও হুশিয়ারী দিয়েছেন কিয়েভের শীর্ষ সমর নেতারা।

ইউক্রেনে সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। রুশ হামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্যে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।

ইউক্রেন সংঘাতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় মিত্রদের জড়িয়ে পরার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় হুশিয়ারী দিয়েছে রাশিয়া। রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া পর্যাপ্ত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। আশা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা উত্তেজনার পারদ বৃদ্ধির বিপদ অনুধাবনে সমর্থ হবে।

সোমবার সকালে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর কেঁপে উঠে রাশিয়ার একের পর এক মিসাইল আর ড্রেন হামলা। রাজধানী কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে ব্যস্ত সড়ক, শিশুদের খেলার জায়গা এবং জার্মান দূতাবাসে আঘাত হানে রুশ সেনাদের ছোঁড়া মিসাইল। রুশ নেতা পুতিন জানান ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের প্রতিশোধ হিসেবেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযানের নামে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, ইউক্রেনে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষা, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করতে এই অভিযান। এর নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে রাশিয়াও পশ্চিমা দেশগুলোর উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল রুশ মুদ্রা ছাড়া বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়ে বিপাকে ফেলে অনেক দেশকে। ইউরোপে দেখা দেয় জ্বালানি সংকট। এরিমধ্যেই ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের লাইনে ফাটলের মতো আত্মঘাতী ঘটনাও বিপদ বাড়িয়েছে ইউরোপের।

শুরুতে বিস্তৃত অঞ্চলে হামলা চালালেও কয়েক সপ্তাহ পর নিজেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে হামলা চালাতে থাকে মস্কো। জাপোরিজঝিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ দখলে আসে বিভিন্ন এলাকা। আগস্ট মাসে দনবাসে অঞ্চলের দোনেতস্ক ও লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী। পরে গণভোট করে এ দুটি অঞ্চলসহ খেরসন ও জাপোরিজঝিয়াকে রাশিয়ার করে নেন পুতিন।

এদিকে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সেনাদের হটিয়ে অল্প সময়েই বিশাল এলাকা পুনর্দখল করতে থাকে। এমন পরিস্থিতে পুতিনের পরমাণু হামলা চালানোর পরিকল্পনার খবরও তীব্র হতে থাকে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছিলেন, ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে সহিংসতা বাড়াতে পারেন পুতিন, নির্বিচারে বোমাবর্ষণের শঙ্কাও ছিলো।

গত শনিবার কার্চ সেতুতে ঘটে বিস্ফোরণ। এদিকে, সামরিক বাহিনীর নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেন পুতিন। এরপরই সোমবারের এই মিসাইল হামলা। বলা হচ্ছে, সবশেষ গত কয়েকমাসে রাজধানী কিয়েভে এটিই প্রথম হামলার ঘটনা। আর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলা শুরুর প্রথম সপ্তাহের পর থেকে ইউক্রেনে এটি সবচেয়ে ব্যাপক হামলা।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker