আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি গেলেন ভারতীয় নাগরিক

বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যু করে ভারতীয় এক নাগরিককে সৌদি আরবে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বিরুদ্ধে। ভয়াবহ এই জালিয়াতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। অনুসন্ধান ও তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় ভারতীয় নাগরিকসহ ওই কর্মকর্তাদের আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে যাচ্ছে দুদক!

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অভিযুক্তরা হলেন পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো: আবজাউল আলম। অফিস সহায়ক রঞ্জু লাল সরকার ও হুমায়ুন কবির, রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের সাবেক উচ্চমান সহকারী ও আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট মো: দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিন, রেকর্ড কিপার মো: ইব্রাহিম হোসেন ও সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো: আবদুল ওয়াদুদ।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ এই জালিয়াতির ঘটনায় বহু আগেই দুদুকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এরপরই কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই মামলার তদন্ত শুরু হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুনে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর অফিস সহায়ক রঞ্জু লাল সরকার আবেদনপত্রটি অফিসিয়ালি জমা দেখিয়ে নিজের কাছে রাখে দেন। পরে তার পরিচিত এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে অবৈধ লেনদেনে চুক্তিবদ্ধ হন তারা।

পরে রঞ্জু লাল সরকার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো: নূরুল ইসলাম রাজুর মাধ্যমে জন্মসনদ তৈরি করে ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি জামা দেন। একই বছরের ৯ জুলাই পাসপোর্টের উচ্চমান সহকারী মো: দেলোয়ার হোসেনের কাছে থেকে আবেদনপত্রটি অনুমোদন করে অন্যান্য আবেদনপত্রের ন্যায় একই তারিখে বায়ো-এনরোলমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন না করে ১২ জুলাই তা সম্পন্ন করা হয়।

পরে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পুলিশের রাজশাহী সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আবেদনসহ মোট ৪৩টি আবেদনের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পুলিশ প্রতিবেদনে আবেদনকারী হাফেজ আহম্মেদকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্পেশাল ব্রাঞ্চের মডিউলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আসামি মো: হুমায়ুন কবির অসৎ উদ্দেশ্যে বিষয়টি কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট দেননি। ফলে ১৮ আগস্ট আবেদনপত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্রুভাল মডিউলে চলে যায়। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো: আবজাউল আলম তার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে সহায়তাকারী ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিনের মাধ্যমে ৩০ আগস্ট ডাটা কারেকশন (ঠিকানা- বাড়ির নম্বর সংশোধন) করে পাসপোর্ট প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

এরপর আসামি রঞ্জু লাল সরকার ৭ সেপ্টেম্বর সকালে তৎকালীন রেকর্ড কিপার আসামি মো: ইব্রাহিম হোসেনের সহযোগিতায় পাসপোর্ট ডেলিভারি করিয়ে নেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমানে সৌদি আরবে যান। হাফেজ আহম্মেদ দেশ ছাড়ার পর তার আবেদনের মূল রেকর্ডপত্র রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েব করা হয়।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker