আন্তর্জাতিক

বাড়ি ফেরার দাবিতে রোহিঙ্গাদের মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ

মিয়ানমারে ফিরে যাবার দাবিতে ‘গো ব্যাক হোম’ স্লোগানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিছিল ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।

হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এই বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মিছিল থেকে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

গত কয়েকদিন ধরেই রোহিঙ্গারা ‘বাড়ি চলো’ স্লোগানে এই কর্মসূচির প্রচার চালিয়ে আসছিল। তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে দুটি প্রচারপত্র বিলি করছিল বলে জানিয়েছে এপিবিএন।

একটি প্রচারপত্রের শেষে প্রচারকারী হিসেবে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের’ সদস্য ডা. তৈয়ব ও মো. রেজার নাম রয়েছে।

রোববার সকাল ১০টায় কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন রোহিঙ্গারা। সেই মিছিলে সমবেত কণ্ঠে ছিলো দেশের ফেরার আকুতি।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবসের আগের দিন এই মিছিলে রোহিঙ্গারা জানান, শরণার্থী জীবন নিয়ে তারা বেঁচে থাকতে চান না। টেকসই প্রত্যাবসনের মধ্য দিয়ে আপন ঠিকানায় ফিরতে চান।

রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভাষায় ও ইংরেজিতে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশ যোগ দেয়। এসবে লেখা ছিলো ‘চল চলো বাড়ি যাই, চলো মায়ানমারে যাই’ শ্লোগানে বাড়ি ফেরার আকুতি।

বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্প ২৭ নম্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ২৬ নম্বর ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) অফিস চত্বরে এসে শেষ হয়।

পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রোহিঙ্গা নেতারা দেশে দেশে মানবিক সংকটের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট যেন হারিয়ে না যায় সেই অনুরোধও করেন।

সমাবেশে ২৭ নম্বর ক্যাম্পের মাস্টার ফায়সাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলিম। এখন জোরপূর্বক রাষ্ট্রহীন মানুষ।

২০১৭ সালের দেশত্যাগের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। আর কতদিন গৃহহীন থাকব? আমরা গৃহহীন থাকতে চাই না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

স্বদেশ মিয়ানমার নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে ফিরে যেতে চাই এবং সেখানে যথাযথ অধিকার নিয়ে নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে চাই।

রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত, ধর্ষণ, হত্যার শিকার। বিভিন্ন সময়ে গ্রাম ও ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে।

মানবিক ভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাস্টার ফায়সাল বলেন, কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।

রোহিঙ্গাদের এই কর্মসূচিকে ঘিরে উখিয়া ও টেকনাফে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দেশে ফিরে যেতে দুই হাত তুলে প্রার্থনা করেন সমাবেশে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ অগাস্ট প্রথমবার সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। সেই সমাবেশের নেতৃত্ব রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাকে হত্যা করা হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker