ঢাকিরা অর্থের বিনিময়ে পূজার আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে তারা বাদ্যের তালে তালে মাতিয়ে রাখেন মণ্ডপগুলো। কোন দলের চুক্তি মূল্য কত হবে, তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার ওপর। তাই হাটেই দক্ষতা যাচাই করে দলগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় আয়োজকরা।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাটে হাজির হয়েছেন অসংখ্য বাদক। সাধারণত তাদের সঙ্গে দলগতভাবে চুক্তি হয়। সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায় তাদের চুক্তি মূল্য। ঢাকিরা বংশ পরম্পরায় প্রতি বছরই এ হাটে ঢাক-ঢোল নিয়ে উপস্থিত হয়।
কথিত আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রাসাদে দুর্গা পূজার আয়োজন করতেন। কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীর চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। একবার রাজা নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে ঢাকার বিক্রমপুরের (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ) বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান।
সে সময় নৌপথে অসংখ্য ঢাকির দল পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাটে সমবেত হন। রাজা নিজে দাঁড়িয়ে একে একে বাজনা শুনে সেরা দলটি বেছে নিতেন এবং পুরস্কৃত করতেন। সেই থেকেই যাত্রাঘাটে ঢাকের হাটের প্রচলন শুরু হয়। পরে এ হাট স্থানান্তর করে কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায় আনা হয়।
প্রতি বছরই ঢাকের হাটে আসে অসংখ্য লোক। শুধু এখান থেকেই পছন্দমত ঢাকি পাওয়া যায়। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকিরা আসেন। তাদের মনোমুগ্ধকর বাজনা শুনে পছন্দমতো কাউকে বেছে নেয়।
কটিয়াদী ঢাকের হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বেনি মাদব ঘোষ বলেন, ইতোমধ্যে ১৩৩টি ঢাকি দল চুক্তিবদ্ধ হয়ে হাট ছেড়েছে। সর্বোচ্চ এক লাখ এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকায় ঢাকিরা মণ্ডপে গেছেন। তবে কিছু ঢাকির জন্য মণ্ডপ মিলবে না। তাঁদের খাওয়া-দাওয়া ও যাতায়াতের খরচ ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
দিলীপ কুমার সাহা বলেন, এ হাটে ঘুরে ঘুরে বাদকদের বাজনা পরখ করে দেখেন পূজার আয়োজনকারীরা। ঢাকিদের বাজনা পছন্দ হলে আর দরদামে মিলে গেলে বায়না করে নিয়ে যায় তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল গণমাধ্যমকে জানান, পূজার আয়োজক ও বাদকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদারকির দ্বায়িত্ব নেয়া হয়েছে।