ইতিহাস ও ঐতিহ্য

হাতের লেখা চিঠিতে প্রিয়জনের সুভাস থাকতো

চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে, লন্ঠন জ্বালাইয়া নিবাইয়া চমকে চমকে রাতে।

চিঠি লিখেছে….. 

চিঠি নিয়ে চমৎকার অনুভূতিগুলি আজ জীর্ণতায় আচ্ছাদিত।বিখ্যাত এ গানটির মত গান, কবিতা, ছন্দে আর লেখা হয়না চিঠি নিয়ে। ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চিঠি লেখার মাধ্যমেরও পরিবর্তন হয়েছে।

‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, এই গানের বোল বাঁধতে গিয়ে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কি কোনো দিন ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে (ই-মেইলে) চিঠি লিখবে!

শেষ কবে চিঠি লিখেছেন বা পেয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেই দিতে পারবে না। প্রযুক্তির কল্যাণেই চিঠি লেখার শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

Image

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস উপলক্ষে অনেককেই আপনজনের কাছে চিঠি লিখতে দেখা গেছে, কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ত্রীর দেয়া চিঠি পোস্ট করতেও লক্ষ্য করা যায়।

প্রিয়জনের চিঠির অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোর্ধ জৈনেক ব্যাক্তি বলেন, যৌবনে প্রেমিকার হাতের রক্তের লেখা চিঠিগুলি যখন বুক পকেটে রেখে দিতাম মনে হতো সে বুঝি সারাক্ষণ সাথেই আছে আর চিঠি খুলে যখন পড়তাম ভালোবাসার ব্যকুলতায় চোখে জল এসে যেত।প্রিয়জনের চিঠিতে তার মেহেদী রাঙ্গা হাতের ঘ্রাণ লেগে থাকতো। চিঠিতে মিশে থাকতো প্রিয়ার চুলের সুভাস।

ঘোড়ার ডাক প্রচলনের আগে কীভাবে চিঠি আদান-প্রদান হতো, তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও আজকাল দাপ্তরিক কাজের নথি বা আবেদনপত্র ছাড়া কেউ ডাকঘরে যে যায় না, সেটা সবারই জানা।

Image

আবেগ এখন আর শব্দে প্রকাশ পায় না। আবেগ বোঝাতে মেসেঞ্জার বা হোয়াটস্যাপে ইমোজি পাঠানো হয়।

হোসেনপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে ই-মেইলে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খুদে বার্তার ভিড়ে কাগজের চিঠি হারিয়ে গেছে।তবুও বলব চিঠি দিবস সফল হোক। প্রতিটা চিঠির বার্তায় রসালো আমেজ ছিলো, প্রিয় মানুষের দেয়া চিঠি বারবার পড়ে কল্পনায় হারিয়ে যেতো মন।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর আজকের এই দিনে পালিত হয়ে আসছে ‘আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস’। এই দিবসের শুরু ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রিচার্ড সিম্পকিনের হাত ধরে। নব্বই দশকের শেষের দিকে তিনি দেশের বড় ব্যক্তিত্বদের চিঠি পাঠাতেন। তবে বেশিরভাগ সময় তিনি সেসব চিঠির উত্তর পেতেন না। আর যখন কোনো চিঠির উত্তর পেতেন, তখন তার আনন্দের সীমা থাকত না। সেই ভালোবাসা থেকে সিম্পকিন ২০১৪ সালে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন চিঠি লেখার চর্চা আবার ফিরে আসুক।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker