ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কদমফুল: ঐতিহ্যের প্রতীক, তবে বিলুপ্তির পথে বর্ষার অনিন্দ্য সৌন্দর্য

ইংরেজি চর্চায় এখন আর অনেকেরই মনে থাকে না বাংলা ঋতু কিংবা মাসের নাম, কিন্তু কদমফুল মনে করিয়ে দিচ্ছে **আষাঢ়-শ্রাবণ মাস** নিয়ে প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা কদমফুলগুলো খুব সহজেই মন কাড়ে ফুলপ্রেমীদের। আবার গ্রামীণ শিশুদের খেলার প্রধান উপকরণ হিসেবে এ ফুলের নেই কোনো জুড়ি। এছাড়া মধু সংগ্রহে ফুলে ব্যস্ততা বেড়েছে মৌমাছি‘সহ অসংখ্য পতঙ্গের। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ধুয়ে মুছে অমলিন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অবহেলিত সাদা-হলুদ রঙের কদমফুল। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি ভেজা গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদা-হলুদ রঙের নান্দনিক এ ফুল। তরুণ-তরুণীরা কদমের এ নান্দনিক ফুল তাদের প্রিয়জনকেও উপহার দেয়। খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও। আর কন্যা শিশুরা মনের আনন্দে খোঁপায় বাঁধে কদমফুল। আবার কতেক শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলাকার অংশটি ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলায় মেতে উঠে।

হারিয়ে যাচ্ছে কদমফুলের জৌলুস:

আদিকাল থেকে বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাওয়া নান্দনিক কদমফুল আজ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। বৃত্তপুস্প, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর‘সহ কদমের রয়েছে আরও অগনিত নাম। ছোট্ট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার, যাতে হলুদ রঙের পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসতে থাকে প্রকৃতির মাঝে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে নান্দনিক হলেও এর আর্থিক মূল্য খুবই স্বল্প। কদম কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরিতে অনুপযোগী। তবে কাঠ দিয়ে বাক্সপেটরা, দিয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। জ্বালানী হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। শুধু সৌন্দর্যে আর মাধুর্যে নয়, ভেষজগুণের পাশাপাশি কদমে রয়েছে আরও কতেক গুরুত্ব। কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক হলেও গ্রাম বাংলায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই অতীত।

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টিতে হালকা দক্ষিণা বাতাসে হলুদ-সাদা ফুলে দোল খাওয়া কদমের নেই আগের মতো সেই জৌলুস। দূর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে হলুদ-সাদা ফুলের ঝর্ণা। প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ বৃক্ষের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

Image

সংরক্ষণ ও বনায়নের প্রয়োজনীয়তা:

সাহেবের চর গ্রামের শাহনেওয়াজ বলেন, “উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বাড়ীর সামনে, রাস্তার পাশে, পুকুর ও খালের পাড় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক বড় বড় কদমগাছের বনায়ন দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি।”

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আশরাফ আহমেদ বলেন, “বর্তমানে বৃক্ষ রোপনের তালিকায় নেই কদমগাছ, তবে নিয়মিত কর্তন হচ্ছে। এ গাছ রোপণে এখন পর্যন্ত নেই কোনো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগও।”

সচেতন মহল জানান, বর্তমানে শিমুল‘সহ অন্যান্য ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও কদমের বেলায় দেখা যাচ্ছে না তেমন‘টা। আষাঢ়-শ্রাবণে এক সময় পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে কদমফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্ত হওয়া কদমগাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker