কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার একটি ঐতিহাসিক গ্রামের নাম কোষাকান্দা, এ গ্রামটি পাকুন্দিয়া সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
জানা যায়, গ্রামটির নামকরণ বিষয়ে একটি রহস্যময় রসালো মজার ঘটনা প্রচলিত আছে, শ্রীপুরের রাজা কেদার রায় ও চাঁদ রায়ের ছিল এক অপূর্ব সুন্দরী বোন, যিনি বাল্য কালেই বিধবা হয়েছিলেন। বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন মসনদে আলা বীর ঈশা খাঁ।
একদিন ঈসা খাঁ মোঘল রাজ দরবার হতে বাইশ পরগনার সনদ নিয়ে নদী পথে তাঁর নিজ রাজধানী বর্তমান করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ীতে আসছিলেন। আসার পথে শ্রীপুরের কীর্তিনালা নদীর ঘাটে রাজা কেদার রায় ও চাঁদ রায়ের ছোট বোন সোনামনিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।সোনামনির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে ঈশা খাঁ শ্রীপুর ঘাটে তার কোষা (নৌকা) নিয়ে রাতে অবস্থান করে। সকাল হবার পূর্বেই তিনি কেদার রায়ের রাজবাড়ী থেকে সোনামনিকে স্বকৌশলে কব্জা করে শ্রীপুর ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান। সোনামনিকে বিয়ে করার জন্য সেখান থেকে পান, সুপারি, মিষ্টি, নৈবেদ্য জিনিসাদি, সিঁদুর ইত্যাদি ক্রয় করে অন্য একটি কোষায় ভরে জঙ্গলবাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তার কোষার বহর শীতলক্ষ্যা ও ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে এগার সিন্দুরে পৌঁছায়। প্রাচীনকালে ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা নদী বর্তমান মির্জাপুর থেকে আলোরস্টোর সুখিয়া হয়ে জঙ্গলবাড়ীর দিকে প্রবাহমান ছিল। কোষার বহর এগার সিন্দুর ছাড়ার পরে ঈশা খাঁ ঘুমিয়ে পড়েন।
ঘুমে স্বপ্নে দেখেন যে, স্বয়ং জলের অধিষ্ঠাত্রী গঙ্গা দেবী তাঁকে বলছেন, হে ঈশা খাঁ তুমি আমার বোন সোনামনিকে আগামীকাল বিয়ে করবে, আর সবাইকে মিষ্টি মুখ করানোর জন্য ঢাকা থেকে মিষ্টিও এনেছ। তবে আমাকেও সামনের কুঁড়ে মিষ্টি দিয়ে যেও।” এ অবস্থায় ঈশা খাঁর তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়।
বিয়ে উপলক্ষ্যে কেনা পান, সুপারী, মিষ্টি ভর্তি কোষাটি ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনায় পার হবার গঙ্গা দেবীর বর্ণিত সামনের কুঁড়ে (নদীর গভীর জলভাগ) ডুবে যায়। ঈশা খাঁ অনেক চেষ্টা করেও কুঁড় থেকে তাঁর সে কোষাটি তুলতে পারেনি।
এক সময় নদীটি ভরাট হয়ে চর জেগে উঠে যেখানে কোষাটি ডুবে গিয়েছিল সেখানে কোষা অর্থাৎ নৌকার আকৃতিতে অন্য সব এলাকা থেকে উঁচু হয়ে চর জেগে উঠে। আজও এ জায়গাটায় নৌকার আকৃতি উপলব্ধি করা যায়।
ঈশা খাঁর ইতিহাস থেকে এ গ্রামের কোষার নমুনা দেখতে অংশটুকু নিয়ে পরবর্তীতে গ্রামের নাম রাখা হয় কোষাকান্দা। এমনটিই লোকমুখে রটিত রয়েছে। আনিস আহমেদ শিবলীর বর্ণনাতেও এমনটি ফুঁটে উঠে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.