বিশ্ব

গাজার যুদ্ধপরবর্তী শাসন নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হলে কে গাজা শাসন করবে? পাঁচ সপ্তাহের লড়াইয়ের পর উত্তরটি এখনো বিভ্রান্তিতে আচ্ছন্ন।

সশস্ত্র শাখাসহ ফিলিস্তিনি ইসলামী গোষ্ঠী হামাস ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের উপকূলীয় অঞ্চল শাসন করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সঙ্গে যুদ্ধের পর সেই বছর হামাস ক্ষমতা দখল করেছিল। তবে ইসরায়েল এখন গাজায় একটি কঠোর অবরোধ আরোপ করেছে, মানুষ ও পণ্যের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত মাসের শেষের দিকে বলেছিলেন, পিএকে হামাসের কাছ থেকে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা উচিত। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সময়ে ভূমিকা পালন করবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে বর্তমানে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের আংশিক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে এই মাসের শুরুর দিকে ব্লিনকেনের সঙ্গে এক বৈঠকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছিলেন, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা ঘিরে কয়েক দশকের পুরনো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি ‘বিস্তৃত রাজনৈতিক সমাধান’ পাওয়া গেলেই গাজায় পিএ ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে।

গত বুধবার ব্লিনকেনও আবার ‘ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন শাসন’ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে ‘পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত’ গাজার কথা বলেছেন।

৮৮ বছর বয়সী আব্বাস ১৮ বছর ধরে পিএর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সংযুক্ত ইসরায়েলি বসতি ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের দ্রুত সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে শক্তিহীন।

‘একটু আশা’
দীর্ঘদিন ধরে পিএকে পাশে রাখতে চাওয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার ফক্স নিউজকে বলেছেন, তার দেশ গাজা পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা করছে না।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করেছিল এবং ২০০৫ সালে প্রত্যাহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই ছিল, স্থানীয় কর্তৃত্বও পিএর কাছে রেখেছিল।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা গাজাকে শাসন করতে চাই না। আমরা এটি দখল করতে চাই না। তবে আমরা সেখানে এবং আমাদেরকে একটি ভালো ভবিষ্যৎ দেখতে চাই।’

গাজার ভবিষ্যতের জন্য তার পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, দরিদ্র ও অবরুদ্ধ অঞ্চলটিকে অবশ্যই ‘বেসামরিকীকরণ, কট্টরপন্থীমুক্ত এবং পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

আমাদের একটি সরকার খুঁজে বের করতে হবে, একটি বেসামরিক সরকার, যা সেখানে থাকবে।’ তবে কে এটি গঠন করতে পারে তিনি তার কোনো বিবরণ দেননি।

৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ব্যাপকভাবে সামরিকীকৃত সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হিসাবে, এতে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় তার আক্রমণ শুরু করে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসরায়েল বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এতে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে হাজার হাজার শিশুসহ অনেক বেসামরিক নাগরিক রয়েছে।

২০০৭ সাল থেকে কোনো সভা না করা ফিলিস্তিন আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার হাসান খ্রেশেহ বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে কোনো নেতা এই পরিস্থিতিতে গাজা শাসন করতে রাজি হবেন। কোনো ফিলিস্তিনি, কোনো বিবেকবান ব্যক্তি আমেরিকান বা ইসরায়েলি ট্যাংক অবস্থান করার মধ্যে গাজায় ফিরে যেতে রাজি হবে না।’

এ ছাড়া একটি নোটে বিশ্লেষকদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলেছে, ‘সামান্য আশা’ ছিল যে ইতিমধ্যে গভীরভাবে অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি আক্রমণের পেছনে গাজায় ফিরে আসতে পারে এবং তারা ‘শত্রু হিসেবে বিবেচিত’ হবে না।

‘কেউ জানে না’
এই সপ্তাহের শুরুতে লেবাননভিত্তিক হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেছিলেন, গোষ্ঠীটি গাজা উপত্যকায় একটি পুতুল সরকার মেনে নেবে না এবং ভূখণ্ডেই থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি প্রশাসন তৈরি করার পরিকল্পনা আরোপ করতে দেবে না, যা তাদের জন্য উপযুক্ত এবং যেটি দখলদারির (ইসরায়েল) জন্য উপযুক্ত।’

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরায়েল এবং অন্যরা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দলটির রাজনৈতিক বিষয়ের নির্বাসিত উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরি পরামর্শ দিয়েছেন, হামাসের ভবিষ্যৎ সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘হামাস-পরবর্তী বিষয়ে কথা বলা মানে ফিলিস্তিন-পরবর্তী কথা বলা।’

পাশাপাশি হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ শুক্রবার ভূখণ্ডে যেকোনো চাপিয়ে দেওয়া শক্তি প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের উপমহাসচিব মোহাম্মদ আল-হিন্দি বলেছেন, ‘যদি গাজা শাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়…ফিলিস্তিনি জনগণ সেটিকে একটি দখলদার বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করবে এবং এর বিরোধিতা করবে।’

গাজা উপত্যকার রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক জামাল আল-ফাদি বিশ্বাস করেন, পিএ গাজার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে রাজি হলেও হামাসের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য চুক্তি ছাড়া তা হবে না। অন্যথায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ‘নতুন গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করবে’ বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় অবস্থিত মানবাধিকার আইনজীবী মাজেদ আল-আরুরি বলেছেন, সর্বশেষ যুদ্ধ কিভাবে শুরু হয়েছে তা সবাই জানে। ‘কিন্তু কিভাবে বা কোন শর্তে এটি শেষ হবে তা কেউ জানে না।’


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker