বিশ্ব

মানবদেহে প্রথমবার দেয়া হলো পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত

পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো দুই ব্যক্তির শরীরে পরীক্ষাগারে তৈরি কৃত্রিম রক্ত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।

সোমবার (৭ নভেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুই ব্যক্তির শরীরে এর কী ধরণের প্রভাব পড়ে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ব্লাড এন্ড ট্রান্সফিউশন বিভাগে ব্রিস্টল, ক্যামব্রিজ ও লন্ডনের গবেষক দল এ নিয়ে কাজ করছেন। ফুসফুস থেকে যেসব লোহিত রক্ত কণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে তাদের নিয়েই করা হচ্ছে এ গবেষণা।

প্রাথমিকভাবে দুইজন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিলেও কমপক্ষে ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে এই প্রক্রিয়া পরীক্ষা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাদের রক্তে সামান্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মেশানো হয়েছে, যাতে করে তা কতদিন মানুষের শরীরে থাকে তা পর্যবেক্ষণ করা যায়।

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ রক্তদানের জন্য সবসময়ই মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে এই গবেষণার লক্ষ্য হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল গ্রুপের রক্ত কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা।

‘সিকল সেল অ্যানিমিয়া’ রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হয়। এ চিকিৎসায় সুপরিচিত ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ এবং ‘ও’ গ্রুপ ছাড়াও আরও জটিল টিস্যু-ম্যাচিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। যদি দাতা ও গ্রহীতার রক্ত হুবহু না মেলে তাহলে এই চিকিৎসা আর কাজ করে না।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক অ্যাশলি টয় বলেন, কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ এতোটাই বিরল যে পুরো দেশে মাত্র ১০ জনের মতো ব্যক্তি তা দান করার উপযোগী হতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, এই মুহূর্তে পুরো যুক্তরাজ্যতে ‘বম্বে’ গ্রুপের মাত্র তিন ইউনিট রক্ত সংগ্রহে রয়েছে। এই গ্রুপটি সর্বপ্রথম ভারতে শনাক্ত হয়।

যেভাবে রক্ত তৈরি করা হয়

প্রথমে ৪৭০ মিলিলিটারের মতো রক্ত সাধারণ ডোনেশনের মধ্যমে নেয়া হয়। এরপর চুম্বক গুটি ব্যবহার করে সেখান থেকে সেসব স্টেম সেল আলাদা করে নেয়া হয়, যেগুলো লোহিত রক্ত কণিকায় পরিণত হতে সক্ষম।

পরে এই স্টেম সেলগুলোকে পরীক্ষাগারে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন করা হয় ও লোহিত কণিকায় পরিণত করা হয়।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। পাঁচ লাখ স্টেম সেল থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করা যায়।

তবে এখানেই শেষ নয়। এই লোহিত কণিকাগুলোকে ফিল্টার করে দেড় হাজার লোহিত কণিকা পাওয়া যায় যেগুলো ট্র্যান্সপ্লান্টের জন্য উপযুক্ত।

অধ্যাপক অ্যাশলি টয় বলেন, এভাবে ভবিষ্যতে যত বেশি পরিমাণে সম্ভব রক্ত উৎপাদন করাই তাদের লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, মানুষের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা ১২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। রক্তদানের ক্ষেত্রে সাধারণত নতুন ও পুরনো লোহিত কণিকার মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker