উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তাই সুযোগ পেলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দেশের যেকোনো প্রান্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হন। শুধু ছাত্র নয়, ছাত্রীরাও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। অনেক ছাত্রী বাড়ি থেকে কয়েক শ কিলোমিটার দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, যেখানে তার পরিচিত কেউ নেই।
ইউজিসি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়—এই তিনটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ আবাসিক সুবিধা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ৮২ শতাংশের হল সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৪ শতাংশ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর হল সুবিধা রয়েছে।
সেখানে সাত হাজার ৭৩৭ জন ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধার হার ৪৫ শতাংশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি ছাত্রী হলে পাঁচ হাজার ২৭৩, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুটি ছাত্রী হলে ৭৪৫, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ছাত্রী হলে দুই হাজার ৫৭১, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ছাত্রী হলে এক হাজার ৯২৫, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি ছাত্রী হলে এক হাজার ৫৭০, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রী হলে এক হাজার ১৬৮, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ছাত্রী হলে এক হাজার ৯২১, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রী হলে ৫৬০, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হলে ৩৫০, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হলে ৮১৩, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী হলে ২২৬, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ছাত্রী হলে এক হাজার ৬৩৫ জন ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, জবিতে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মেসে মিল অফ রাখা, টিউশনির জন্য হাহাকার করতে হয় তাদের। এমনকি থাকা-খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে গ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বড় অংশই আসেন মফস্বল এলাকা থেকে। এ জন্য তাদের পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা থাকা খুব দরকার। অনেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে গিয়ে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পান। অনেক শিক্ষার্থী আসেন দরিদ্র পরিবার থেকে। তাদের মেসে থাকার খরচ জোগাতেও হিমশিম খায় পরিবার। ফলে অনেকে নিজের পড়াশোনা বাদ দিয়ে হন্যে হয়ে টিউশনি খোঁজেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা-ও মেলে না। ফলে ঠিকমতো পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর মেয়েদের মেসে থাকার সমস্যা আরো বেশি। যেসব পরিবার মেসের খরচ জোগাতে পারে তাদের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে।