আইন-আদালতবিনোদন

জামিন শুনানিতে মমতাজ: পিপি স্বামী নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই বিচারকের হস্তক্ষেপ, আবেদন নামঞ্জুর

সাবেক এমপি মমতাজ বেগমের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি তার স্বামী সংখ্যা নিয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলে বিচারক তাকে থামিয়ে দেন; শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুরে মো. সাগর নামের এক হকার নিহতের মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে লোকসংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে আজ শনিবার (১৭ মে) আদালতে হাজির করা হয়। এদিন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন আবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বিতর্কিত প্রশ্ন এবং তাতে বিচারকের হস্তক্ষেপ আদালতের কার্যক্রমে নাটকীয়তা যোগ করে। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে হাজিরা ও জামিন শুনানি

চার দিনের রিমান্ড শেষে মমতাজ বেগমকে আদালতে হাজির করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মনিরুল ইসলাম তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানান। অন্যদিকে, মমতাজের পক্ষে তার আইনজীবী মাসুদুর রহমান লিংকন জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

আইনজীবী মাসুদুর রহমান লিংকন শুনানিতে বলেন, মামলার ঘটনার সাথে মমতাজ বেগম কোনোভাবে জড়িত নন। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি হলেও তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তার জামিনের প্রার্থনা করছেন।

পিপি ও বিচারকের কথোপকথন এবং রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক

বিতর্কিত প্রশ্ন ও বিচারকের হস্তক্ষেপ:

মমতাজের আইনজীবীর জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী তার যুক্তিতর্ক শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে জানতে চান, “মমতাজ বেগমের স্বামী কয়জন ও তাদের নাম কি।”

তখন বিচারক তাকে থামিয়ে দেন এবং এই বিষয় বাদ দিয়ে মামলার বিষয়ে কথা বলতে পরামর্শ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক: (পিপি ওমর ফারুক ফারুকী)

পিপি তার যুক্তিতর্কে বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব, প্রধান বিচারপতি, ঢাকা মহানগর পিপি সহ আরও অনেকে একযোগে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

তিনি মমতাজ বেগমের গ্রেপ্তারের পর জনগণের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, কিছু মানুষের চিত্র দেখেছি, এলাকায় তারা মিষ্টি বিতরণ করেছে। তার দ্বারা মানুষ কীভাবে নির্যাতিত হয়েছে।

মমতাজ সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, সাধারণ রাস্তা থেকে পার্লামেন্টে গিয়ে পৌঁছেছেন। পার্লামেন্টের মত পবিত্র জায়গায় গানের জলসা বসাতেন, বিরোধীদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক বক্তব্য দিতেন। সংসদকে কলুষিত, কলঙ্কিত করেছেন। সংসদে যাবে কারা? আইন প্রণেতা, শিক্ষিত, মার্জিত মানুষ। মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা রাখে না তারা সংসদ সদস্য হয়েছে ভোট চুরি করে, রাতের ভোটে। সংসদে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার বাপের নাম জানতে চান। এ পর্যায়ে আবারও তিনি মমতাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বলেন তো, আপনার বাপের নাম কী, স্বামী কয়জন। স্বামীর নাম কী?”

এসময় আবারও বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে মামলার বিষয়ে কথা বলতে বলেন।

বিচারকের হস্তক্ষেপে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী পুনরায় বলেন, (মমতাজ) মানুষের চরিত্রহনন, বিরোধীদের হেয় করে কাজ করে গেছেন। কীভাবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন চান বুঝি না। আইন সেইভ করলেও জনগণ করছে না। তারা বাইরে বের হতে পারেন না। পুলিশ ধরার আগে মানুষ ধরে তাদের পুলিশে দিচ্ছে। তারা এত জনবিরোধী কাজ করেছে।

তিনি যুক্তিতর্ক শেষ করে বলেন, জামিন পেলে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই তিনি জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মমতাজ বেগমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে তাকে কারাগারেই থাকতে হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker