গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় ‘অচেনা জন্তুর’ আক্রমণে দিশেহারা মানুষ, ছিঁড়ে নিচ্ছে নাক-কান

অচেনা এক জন্তু। আক্রমণও বেশ ভয়ংকর। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে আসে জন্তুটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিঁড়ে নিচ্ছে মানুষের নাক-কান। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন অদ্ভুত ঘটনা। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন মসজিদের ইমাম। অচেনা এই জন্তুটির আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন।

এমনই এক ‘অচেনা জন্তুর’ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের তালুকজামিরা গ্রামের মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই জন্তুটির আক্রমণে কেউ না কেউ আহত হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও।

মঙ্গলবার তালুকজামিরা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গ্রামবাসী। ভুক্তভোগীদের দাবি, জন্তুটি দেখতে কুকুর কিংবা শিয়ালের মতো। শরীরে রয়েছে ডোরাকাটা দাগ। জন্তুটির সামনের পা দুটি ছোট। মাথা ও লেজ আকারে বড়। এলাকার নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ হামলার শিকার হচ্ছে গবাদি পশু। টানা দেড় মাস ধরে ঘটছে এসব ঘটনা। সুযোগ পেলেই এলাকার ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করছে জন্তুটি।

তালুকজামিরা গ্রামে বাসিন্দা মোনায়ারুল ইসলাম বলেন, মানুষ কিংবা গবাদি পশু পেলেই জন্তুটি পেছন থেকে আক্রমণ করে বসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাফ দিয়ে মানুষের চোখে মুখে আঘাত করে নাক কান ছিঁড়ে নিচ্ছে। অদ্ভুত এ জন্তুটির ভয়ে রাতেও ঘুমাতে পারছেন না স্থানীয়রা। ফসলের মাঠ বা আশপাশে বেড়াতে গেলেও লাঠি হাতে দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করছেন তারা। রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন গ্রামবাসী।

তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর সকালে নিজ বাড়ির পাশে জন্তুটির হামলার শিকার হয় সাত বছর বয়সী রাব্বী। জন্তুটি শিশুটির মুখ-বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে থাবা বসায়। শিশুটির চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে তার মায়ের ওপরও হামলে পড়ে। শেষ পর্যন্ত আরেক প্রতিবেশীর লাঠির তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় অদ্ভুত আকৃতির জন্তুটি।

হরিনাথপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, ঘটনার শুরু দেড় মাস আগে। মাঠে ঘাস কাটতে যান তালুক জামিরা গ্রামের কৃষক, স্থানীয় মসজিদের ৫৬ বছর বয়সী ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু। হঠাৎ তার ওপর লাফিয়ে পড়ে অদ্ভুত একটি জন্তু। হাতের কাস্তে দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেও রক্ষা পাননি তিনি। তার নাক-মুখ রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায় ভয়ংকর জন্তুটি। পরে তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন পর মারা যান তিনি। একই দিনে আরো তিনজনের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে।

এরপর থেকে ঘটছে একের পর এক আক্রমণের ঘটনা। মঙ্গলবার পর্যন্ত আফসার আলী, শেফালী ও মুক্তাসহ অন্তত ২০ জন জন্তুটির আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, একের পর এক এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, অদ্ভুত জন্তুটি পাগলা শিয়াল বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিয়াল পাগল হলে কুকুরের চেয়ে ভয়ানক হয়ে থাকে। আক্রান্তদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী মিলে প্রাণীটিকে প্রতিহত করতে হবে বলে জানান তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker