রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার আলোচিত মেয়র আব্বাস আলীর সরকারি খাল দখল করে নির্মাণাধীন অবৈধ দুইটি মার্কেট ভেঙে ফেলেছে প্রশাসন।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় মার্কেট ভেঙে ফেলার কাজ। দিনভর এ মার্কেট ভেঙে ফেলার সময় উপস্থিত ছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন।
তিনি বলেন, সরকারি খাল দখল করে মেয়র আব্বাসের মার্কেট উচ্ছেদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগথেকে গত ১০ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়।
এরপরে মেয়র আব্বাসকে গত একমাস আগে উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করা হয়। তাকে নোটিশ দেয়ার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে মার্কেট দুটি ভাঙা হচ্ছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল নয়টায় আব্বাসের অবৈধ মার্কেট ভাঙা শুরু হলে স্থানীয় উৎসাহী লোকজন সেখানে ভীড় করেন।
মার্কেট দুটি এমন সময়ে ভাঙা শুরু হল যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মেয়র আব্বাস আলী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এ ছাড়া একই অভিযোগে আব্বাস আলীকেপবা উপজেলা আওয়ামী লীগ কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আব্বাসকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছে।
এ দিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে বছর খানেক আগে কাটাখালি পৌরসভার ওপর দিয়ে যাওয়া খালটি ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পুনঃখনন করে।
গত এপ্রিলের দিকে মেয়র আব্বাস সরকারি এই খালের ওপর মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন। ১৯ জুলাই একতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সরকারি খালের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে খালের ওপর প্রায় ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুট জায়গা জুড়ে এ তিনতলা মার্কেটটি নির্মাণ শুরু করেন আব্বাস। এখানে ইতিমধ্যে দুইতলা ভবন উঠে গেছে।
এই মার্কেটটি আব্বাসের তিন তলা করার পরিকল্পনা ছিল। মার্কেটে ২১টি দোকান হত। অন্যদিকে ব্রিজের উত্তর পাশে খালের ওপর আরেকটি মার্কেটের দুইতলা উঠে গেছে। এই মার্কেটে দোকান হবে মোট ছয়টি। এসব দোকান ইতোমধ্যে আব্বাস স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে সরকারি খালের ওপর মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হলে অভিযোগ করেন কাটাখালি পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত আগস্ট মাসে পবা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
এরপর কয়েক দিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে আবার জোরেশোরে নির্মাণকাজ শুরু করেন আব্বাস। কিন্তু এসবের পরও অদৃশ্য কারণে মার্কেটটি ভাঙেনি স্থানীয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, একমাস আগে মেয়র আব্বাসকে মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন। এ কারণে এখন মার্কেট দুটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।