নওগাঁ

রাতের অন্ধকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কেটে বিক্রি করলেন শিক্ষক

নওগাঁর ধামইরহাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ  গোপনে রাতের অন্ধকারে কেটে বিক্রি করলেন এক শিক্ষক। কর্তনকৃত গাছগুলো রাতেই ছ-মিলে নেয়া হয়েছে। ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজে গাছ কাটার ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোড়পাড় শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। জানা গেছে, ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় ক্যাম্পাসের পতিত জায়গায় বনজ জাতীয় বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই গাছগুলোর প্রকারভেদে ১৫-২০ বছর হয়েছে। অনেক গাছ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। বৃক্ষরোপনের জন্য ওই কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাফিজ রহমান (বকুল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে পুরস্কৃত হন।
বর্তমানে কলেজের চারিদিকে সুবিস্তৃত সীমানা প্রাচীন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত প্রতি রাতে কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মো.নাসির উদ্দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা কমিটিকে না জানিয়ে প্রায় ৪০টির অধিক আকাশমনি ও ঘোড়ানিম জাতীয় গাছ কেটে নিয়ে যায়। গাছ গুলো কাটার পর গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কলেজের পার্শের লোকজন গাছ কাটার বিষয়টি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড.ইঞ্জিনিয়ার ফিজার আহমেদকে অবগত করেন। এরপর  বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা ঝড় শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দামী গাছগুলো কেটে গোড়া মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

গাছ কাটার পর সেগুলো ভ্যানযোগে স্থানীয় দুটি ছ- মিলে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। স্থানীয় মৌসুমী ছ-মিলের পরিচালক মো.হারুনুর রশীদ বিদ্যুৎ জানান, তার মিলে ভ্যান যোগে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বিক্রির উদ্দেশ্যে ২১টি গাছের গুল নিয়ে আসে। তার মধ্যে ১৪টি আকাশমনি গাছের গুল ইতোমধ্যেই তিনি বিক্রি করেছেন। বাকী ৬টি ঘোড়ানিল গাছের গুল আমার মিলে রয়েছে। ওই কলেজের শিক্ষক নাসির উদ্দিন কৌশলে কলেজের নৈশ্যপ্রহরী মো.ওহেদুল ইসলামের কাছ থেকে কলেজের প্রধান ফটকের চাবি নেন। রাতে কলেজের গাছ কেটে ভ্যান যোগে স্থানীয় ছ-মিলে নিয়ে যান। কলেজের নৈশ্যপ্রহরী মো.ওহেদুল ইসলাম জানান,কলেজের পূর্বের অধ্যক্ষ এর মৌখিক আদেশ মোতাবেক ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নাসির উদ্দিনকে কলেজের প্রধান ফটকের একটি চাবি দেয়া হয়। সেই চাবি ৯ আগষ্ট  আমাকে ফেরত দেয়।

এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রভাষক মো.নাসির উদ্দিন বলেন,কলেজ পরিচালনা পর্ষদের মৌখিক আদেশ মোতাবেক কলেজের নতুন সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন এবং পতিত জমিতে রুপালী আম গাছ লাগালোর জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আম গাছ লাগানোর জন্য গাছের সারি সোজা করতে কয়েকটি গাছ কেটেছি। গাছ ও খড়ি বিক্রির ৩ হাজার ৯ শ টাকা আমার কাছে রয়েছে। তিনি আরও বলেন,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক গাছ কাটার বিষয় জানেন।

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.আশরাফুল ইসলাম বলেন,কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে গেলে আমি সবেমাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। পূর্বের অধ্যক্ষের নিকট থেকে কলেজের প্রধান ফটকের চাবি নিয়েছিল শিক্ষক নাসির উদ্দিন। গাছ কর্তনের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গাছ কাটার বিষয়ে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কলেজের সভাপতির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ধামইরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ড.ইঞ্জিনিয়ার ফিজার আহমেদ বলেন.গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজের অতি পুরনো গাছগুলি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু শিক্ষক নাসির উদ্দিন কোন প্রকার আলোচনা না করে নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাতের অন্ধকারে প্রায় ৪০টি গাছ কেটেছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো.নাসির উদ্দিন। এতে কলেজের প্রায় ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ওই শিক্ষক নিঃসন্দেহে নিগৃহীত কাজ করেছেন। দ্রুত গভর্নিং বডির সভা ডেকে বিষয়টি আলোচনা পূর্বক দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker