নওগাঁ

নওগাঁয় ৮’শ একর খাস জমি রক্ষায় ইউএনওর উদ্যোগ

নওগাঁর মান্দা উপজেলার উথরাইল বিলে খাস জমি উদ্ধার এবং বেহাত হওয়া ব্যক্তি মালিকানা জমি প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করেছে মান্দা উপজেলা প্রশাসন।

এ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী বিল এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। গণশুনানির প্রথম দিনে ভাঁরশো ইউনিয়নের ৪টি মৌজার অন্তত ২৫০ জন কৃষক অংশ নেন।

গণশুনানীতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন জাহান লুনা, মান্দা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গণি, সেনাবাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিদের গণশুনানির বিষয়টি জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী জমির প্রকৃত কাগজপত্র থাকা ব্যক্তি নিবন্ধনে অংশ নেন। এরপর নিবন্ধিত ব্যক্তিরা তাদের দাবীকৃত জমির পক্ষে-বিপক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন।

যাদের প্রমাণাদি সঠিকভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।যারা অন্যের জমি জবরদখল করে রেখেছেন, তাদের নোটিশ দিয়ে জমি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যুগের পর যুগ ধরে সরকারের ‘ক’ তফসিলভুক্ত খাস সম্পত্তি দখল করে খাচ্ছেন অনেকে, সেগুলো উদ্ধার করে দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এত বিপুল পরিমাণ জমির বিরোধ অফিসে বসে মেটানো সম্ভব নয়। আবার এসব কাজে বারবার অফিসে গিয়ে মানুষজনও হয়রানির শিকার হতে পারে। এজন্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রশাসনের সেবা পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নিজের জমি বুঝে পেয়ে মান্দা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক নাহিন প্রমাণিক জানান, দুটি আলাদা খতিয়ানে তাদের প্রায় ১৪ বিঘা জমি ১২ বছর ধরে অন্যের দখলে ছিল। তার বাবা বেঁচে থাকাকালীন জমিগুলো তারা ভোগ করতেন, কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় কয়েকজন জমিগুলো অবৈধভাবে দখল করে ফেলেন। পড়ালেখার জন্য বাইরে থাকায় জমিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

হঠাৎ ইউএনওর এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে তিনি জমি ফেরত নিতে এসেছেন। এরই মধ্যে শুনানিও হয়েছে, যেখানে সেগুলো তাদের জমি হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে। এখন দখলদারদের নোটিশ পাঠালে জমিগুলো দখলমুক্ত হবে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল জানান, বিল এলাকার এসব জমি নিয়ে প্রতি বছরই মারামারি হতো এবং অনেক মামলা ছিল। প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন জমির প্রকৃত মালিকরা স্বস্তি পাবেন, অন্যদিকে সরকারের খাস সম্পত্তিগুলোও সরকারের কাছে ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, শুধুমাত্র মান্দা নয়, জেলাজুড়ে হাজার হাজার বিঘা খাস জমি এবং পুকুর মানুষ ভোগদখল করছে। এগুলো উদ্ধার করা তাদের মূল কাজ। এরই মধ্যে অনেক জমি ও পুকুর উদ্ধার করা হয়েছে এবং কিছু জমির বিষয়ে মামলাও হয়েছে। সেগুলোর পক্ষে আদালতে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। গণশুনানির এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker