নওগাঁ

মুখ দেখে খাবার দেওয়া হয় নওগাঁ হাসপাতালে

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তুলনায় খাবারের বরাদ্দ কম থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও খাবারের বরাদ্দ এখনো ১০০ জনেরই রয়ে গেছে। ফলে যাদেরকে দেখে একটু অসহায় মনে হয় কেবল তাদেরকেই খাবার সরবরাহ করা হয়।

সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, এদিন দুপুরে রোগীদের খেতে দেওয়া হয় মাছ, ভাত এবং সবজি। হাসপাতালের দেওয়া পথ্যের তালিকা অনুযায়ী মাছের জাত এবং সবজি ঠিক থাকলেও ভাতের সঙ্গে ছিল চালের অসঙ্গতি। পথ্য তালিকা অনুযায়ী রোগীদেরকে খাওয়ানোর কথা জিরা অথবা কাটারিভোগ জাতের চালের ভাত। কিন্তু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় রোগীদের খাওয়ানো হচ্ছে স্বর্ণা-৫ জাতের চালের ভাত।

Image

নওগাঁ শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুমা আক্তার। ৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসার জন্য সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করান।

মাসুমা আক্তার বলেন, মাকে নিয়ে সাত দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি। এই সাতদিনে কোনো প্রকার খাবার হাসপাতাল থেকে পাইনি। রাজশাহী বা অন্য জায়গাতেও চিকিৎসার সময় দেখেছি হাসপাতাল থেকে খাবার দেয়। এই রুমে যতগুলো রোগী আছে এই কয়দিনে কেউই খাবার পাননি। আমাদের বাসা না হয় কাছে, তিনবার খাবার আনতে পারি। কিন্তু যারা দূরের, তারাতো একদম অসহায় অবস্থায় আছে।

ষষ্ঠ তলার ৬০৮নং বেডে হার্টের সমস্যা নিয়ে বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৭০ বছর বয়সী সায়তুন খাতুন। তার সঙ্গে থাকা মেয়েরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, চারদিন যাবত মাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। কোনো ধরনের খাবার পাইনি।

Image

নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাটখইর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদা আক্তার ছেলে ইয়াসিন আরাফাতকে নিয়ে গত তিনদিন যাবত ভর্তি আছেন হাসপাতালে।

জাহিদা আক্তার বলেন, প্রথমদিন খাবার পাইনি। এরপর থেকে পেয়েছি। সকালে ডিম, কলা আর চিড়া দিয়েছিল। গতকাল দুপুরে মাংস দিয়েছিল দুই পিস। হাসপাতালের খাবার হিসেবে ভালোই আছে।

খাবার বণ্টনের দায়িত্বে থাকা আব্দুল বারি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা খাবার বিতরণ করি। কোনো ওয়ার্ডে ১৩ জন, কোনোটায় ৭ জন এইভাবে দিয়ে থাকি।

কীভাবে সাতজন এবং ১৩ জন নির্ধারণ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বারি বলেন, ‘স্যারই আমাদেরকে তালিকা দিয়ে দেন। সে অনুযায়ী কাজ করি।’

Image

খাবার বণ্টনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিএমটি ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মহসিন আলী বলেন, ‘বিশেষ দিবসে যে খাবার দেওয়া হয় সেদিন মূলত জিরা অথবা কাটারি চাল ব্যবহার করা হয়।’

পথ্যের তথ্য অনুযায়ী প্রশ্ন করা হলে মহসিন চৌধুরী বলেন, আমার জানামতে আমি জিরা চালই কিনেছিলাম। অসুস্থতার কারণে অনেকদিন বাইরে থাকায় হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। সবকিছুর বরাদ্দ এখনো ১০০ শয্যার জন্যই আসে। যার কারণে খাবারের যে বরাদ্দ সেটিও ১০০ জন রোগীর। এরপরও প্রতিদিন আমরা ১৪০ থেকে ১৫০ জন রোগীকে খাবার দিয়ে থাকি। যাদেরকে একটু অসহায় মনে হয়, তাদেরকে দেখে দেখে খাবার দেওয়া হয়।

Author

দ্বারা
মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker