নওগাঁ

কদমের ঘ্রাণে বর্ষার আগমনী বার্তা

নওগাঁয় জ্যৈষ্ঠের তাপদাহে দেখা মিললো আষাঢ়ের ঘন বর্ষায় ফোঁটা কদমের। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন গাছে গাছে ছেয়ে গেছে বর্ষার এ ফুলে। প্রকৃতির নিয়মে বর্ষার স্মারক বহন করছে কদম ফুল। কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ সবাই পাচ্ছে। তাইতো বর্ষায় গাছে গাছে ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে কদম ফুল। 

শুধু শহর নয় গ্রামেও কদম ফুল সৌরভ ছড়াচ্ছে। চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মধ্যে সাদা-হলুদ মঞ্জুরি ফুলের চিরচেনা কদম গাছ এখন চোখে পড়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায়।

Image

এক সময় সর্বত্র চোখে পড়ত কদম গাছ। বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ত সেই কদম ডালে ফোটা ফুল থোকা থোকা। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আদিকাল থেকে কদম আমাদের প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে আসছে। শুধু সৌন্দর্য্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। বীজ থেকে চারা হয়। চারা গজানোর ৯-১০ বছরের মধ্যে ফুল ফোটে। আষাঢ় মাসে গাছে ফুল আসে। ফুলগুচ্ছ আকারে গোলাকার সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।

কদম ফুলে সৌরভ ছড়ানো পাশাপাশি  এর সাদা-হলুদ রঙ নজর কেড়ে নেয়। কদম গাছ একশ ফুট লম্বা ও ছয়-সাত ফুটেরও বেশি চওড়া হয়ে থাকে। বন্যা ও খরা সহিষ্ণু গাছ শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকতে পারে। কদমের সাদা-হলুদ, পাতার সবুজ কোটি ডাল আন্দোলিত করে প্রকৃতিতে আসত বর্ষাকাল। কদম ছাড়া বর্ষা বেমানান। হলুদ, শুভ্রতার সংমিশ্রণে গোলাকৃতির এই ফুল এখন কদম গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে। কদম গাছের শাখে পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ। কদম ফুলের সৌন্দর্য্যরে মতোই আরও কিছু চমৎকার নাম রয়েছে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি এসবও কদম ফুলের নাম। 

Image

কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো যা বিরহীকে দুঃখী করে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। গীতাতেও রয়েছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি। কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়। বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সব আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। বন্যার পানি পলিমাটি বয়ে এনে দেশকে করে সুজলা- সুফলা। তাই তো বর্ষা ঋতু এত কাব্যময়, প্রেমময়, ঐশ্বর্যশালী। তাই বর্ষাকাল বাঙালির এত প্রিয়।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখা যায় কদম গাছের ডালে ডালে ছেয়ে গেছে ফুলে ফুলে। আর তার অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ করছে সবাইকে। 

Image

ডা: নাঈম সরদার  জানান, কৈশরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কদম ফুল সংগ্রহ করে খেলা করেছি এবং কদম ফুলের গোটা দিয়ে মারবেল খেলা করে আনন্দ উপভোগ করেছি। কিন্তু কালের চক্রে সৌন্দর্য বর্ধক এই বৃক্ষটি দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন- কদম ফুল শুভ্রতার প্রতীক। বাংলাদেশে কদম ফুল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিস্নাত দিনে বাঙালিদের মনে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। অনেক কবি সাহিত্যিক বর্ষার কদম ফুল নিয়ে অনেক কবিতা সাহিত্য রচনা করেছেন। কদম ফুল আসলে বাংলাদেশের প্রকৃতির বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কদম গাছের কাঠ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এটির কোনো ঔষধি গুণ আছে বলে আমার জানা নেই।

Author

দ্বারা
মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker