নওগাঁ
নওগাঁয় অনুমোদন ছাড়াই তৈরি হচ্ছে নকল মৎস্য ওষুধ; অন্য কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে প্রতারণা
ডাক্তারের মোড় সংলগ্ন গোডাউনে চলছে অবৈধ রি-প্যাকিং ও মিশ্রণ তৈরির কাজ; অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের উদ্যোগ
নওগাঁয় কোনো অনুমোদন ছাড়াই অন্য কোম্পানির নাম ও মোড়ক ব্যবহার করে চলছে ভুয়া মৎস্য ওষুধ তৈরির হিড়িক। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ভুয়া মেডিসিন তৈরি হলেও নেই কোনো যথাযথ পদক্ষেপ। এসব ভেজাল ওষুধের প্রভাবে মাছের নানা রকম রোগ থেকে শুরু করে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মৎস্য চাষিদের।
ফলে তাদের দাবি দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নওগাঁর ডাক্তারের মোড় সংলগ্ন সামসুদ্দীনের নর্থ বেঙ্গল গ্রেইন ইন্ডাস্ট্রিজ লি: অটোরাইস মিলের কাছে মেইন রোড সংলগ্ন একটি গোডাউন ঘর ভাড়া নিয়ে মোস্তাফিজুর নামে এক ব্যক্তি বিভিন্ন প্রকার মাছের ওষুধ তৈরি করছে। নেই কোনো সাইনবোর্ড, বাইরের গেটে তালা দিয়ে ভেতরে চলছে এসব অপকর্ম। বাইরে থেকে দেখলে পরিত্যক্ত গোডাউন ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। অথচ ভিতরে চলছে এলাহি কাণ্ড।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোডাউন ঘরের ভেতর শিশুসহ বেশ কয়েকজন কন্টিনার, বস্তার প্যাকেট থেকে ভিন্ন মেডিসিনের সংমিশ্রণ তৈরি করছেন।
গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, গ্যালাক্সো ক্লিন, গ্যালাক্সো ফাস্ট, গ্যালাক্সো অ্যাকুয়া, গ্যালাক্সো নিল, গ্যালাক্সো গ্রোথসহ নানান পণ্যর মোড়ক ও খালি সাদা বোতল রয়েছে। বড় বড় নীল রঙের কন্টিনার ও বিভিন্ন মেডিসিনের বস্তা থেকে ড্রামে ঢালা হচ্ছে এসব মেডিসিন। তারপর মিশ্রণ ভালোভাবে গুলিয়ে কাকের সাহায্যে ছোট ছোট বোতলে ঢেলে লেভেল লাগিয়ে তা বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
বোতলের গায়ে গ্যালাক্সো এগ্রোভেট লি. ঢাকা, বাংলাদেশ কোম্পানির লেভেলিং করে বাজারজাত করছেন তারা। অথচ এই কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন গ্যালাক্সো এগ্রোভেট।
কোনো রসায়নবিদ ছাড়াই অনভিজ্ঞ শিশু দ্বারাই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ভেজাল মাছের ওষুধ। বাংলাদেশে রি-প্যাকিংয়ের অনুমোদন না থাকলেও তারা বড়বড় কন্টিনার থেকে ছোট ছোট বোতলে চালিয়ে যাচ্ছে রি-প্যাকিং।
সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “রাহাত কর্পোরেশন নামে আমার ডিপো অফিসের অনুমোদন নেওয়া আছে। এখানে কোনো কিছু তৈরি হয় না, আমি চিন থেকে মালামাল নিয়ে আসি, ছেড়া ফাঁটা মালগুলো ঠিকঠাক করি এই।”
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মহাদেবপুর মৎস্য অফিস থেকে অনুমোদন নিয়েছি। আমার সব কাগজপত্র আছে।”
মহাদেবপুর মৎস্য অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় মাসখানেক আগে তিনি মহাদেবপুর উপজেলার ধনজইল বাজারে “রাহাত কর্পোরেশন” নামে মাছের ফিডের কাঁচামাল আমদানির জন্য আবেদন করেছেন। যার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আবেদনটি এখনও যাচাই বাচাই চলছে।
মহাদেবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, “তিনি মাছের খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি জন্য আবেদন করেছেন। তাকে কোনো অনুমোদন তো দেওয়া হয়নি, যাচাই চলছে। আর ধনজইল বাজারের ঠিকানা দিয়ে নওগাঁ সদরের মাঝে গোডাউন এটা তো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া আবেদনে এক আর প্রডাক্ট করছে আরেক, এটা তো প্রতারণা।”
তিনি আরও বলেন, “মাছের মেডিসিন রি-প্যাকিং করাই যাবে না। তাছাড়া প্রতারণা করে অন্য কোম্পানির নাম, মোড়ক ব্যাবহার করা এটা তো বিরাট অপরাধ, এটা তিনি অন্যায়ভাবে করছেন, আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
গ্যালাক্সো এগ্রোভেট লি. এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাসিম আহম্মেদ বলেন, “নওগাঁয় আমাদের কোনো শাখা নেই। আমাদের ফ্যাক্টরি ঢাকাতে। রাজশাহীতে আমাদের অফিস রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের কোথাও কোনো অফিস বা ফ্যাক্টরি নেই।”
তিনি বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে জানার পর আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়েছি। আমাদের কোম্পানির একজন কর্মচারি আব্দুর রহিম তার নাম, তিনি মহাদেবপুর উপজেলার সিনিয়র মার্কেটিং অফসার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এবং মোস্তাফিজুর মিলে আমার কোম্পানির প্রডাক্টের নাম-ঠিকানা হুবহু ব্যবহার করে এসব নকল ওষুধ রি-প্যাকিং করে বাজারজাত করছে।”
“এতে করে আমাদের কোম্পানির সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর আমরা দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।”
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বলেন, “আমরা মাছের ওষুধ তৈরির কোনো অনুমোদন দেই না। আমাদের দপ্তর থেকে কেউ যদি মাছের খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে চায় সেটার অনুমোদন দেই। ওষুধ তৈরির তো প্রশ্নই আসে না।”
তিনি বলেন, “অন্য কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে বাজারজাত এটা তো মহা অপরাধ। আমরা বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”