আলুর ন্যায্যমূল্যের দাবিতে নওগাঁয় কৃষকদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
নওগাঁয় আলুর উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারমূল্য কম হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার কৃষকরা ধান-গমের মতো আলুরও সরকার নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। তারা সড়কে আলু ফেলে তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
নওগাঁর আলু চাষিরা ধান-গমের মতো আলুরও সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হয়। নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার কৃষক পরিবার এবং আলু ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর ব্যানারে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে বাজারে আলুর দাম উৎপাদন খরচের অর্ধেকেরও নিচে। প্রতি কেজি আলুতে তাদের ১৭-১৮ টাকা লোকসান হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করায় বাজারের এই অবস্থায় তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার চকবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, “সার-ফসফেটের দাম অনেক বেশি, সেই হিসাবে শুরু থেকেই এ বছর আলুর দাম নেই। খরচের টাকাই উঠছে না। ধান-চালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করতে পারলে আলুর কেন হবে না? সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত আলুর মূল্য যেন নির্ধারণ করে দেয়।”
সদর উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের আরেক কৃষক বুলবুল ইসলাম বলেন, “বাজারে ধানের দাম বেশি, চালের দামও বেশি। কিন্তু আলুর কোনো দাম নেই। হিমাগারেও খরচ বেশি নেওয়া হচ্ছে। এক মণ আলু চাষ করতেই ১২০০-১৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০০-৬০০ টাকা মণ। তাহলে আমরা যাবো কোথায়? সরকার যদি আমাদের জন্য কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আমরা শেষ হয়ে যাবো।”
শহরের বালুডাঙ্গা এলাকার আলু চাষি সাইফুল আলম বলেন, “গরু বিক্রি করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আশায় আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে না। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুতে আগের চেয়ে ৪ টাকা করে বেশি দিতে হচ্ছে। এক কেজি আলু উৎপাদনসহ হিমাগারে রাখতে ২৫-২৬ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ বাজারে পাইকারি দরে ১১-১২ টাকার বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। ঋণের টাকা পরিশোধ করা তো দূরের কথা, খরচের টাকা উঠানো নিয়েই এখন চিন্তার মধ্যে আছি।”
নওগাঁ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার জানান, এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। বছরের এই সময়টাতে অন্যান্য সবজি বাজারে বেশি থাকায় মানুষ আলু কম কিনে। তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) অথবা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে আলু বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।