নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার অপরাধে স্বামী মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আস্সামছ জগলুল হোসেন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৫০)-কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রায়ে আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মোস্তাফিজুর রহমান আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের মেয়ে রাণী বেগম-এর সঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মোস্তাফিজুরকে যৌতুক হিসেবে নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি ভ্যানগাড়ি এবং একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছিল। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই মোস্তাফিজুর তার স্ত্রী রাণী বেগমকে বাবার বাড়ি থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। যৌতুকের টাকা আনতে না পারায় রাণী বেগমকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো।
পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট রাতে মোস্তাফিজুর তার স্ত্রী রাণী বেগমকে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। এই ঘটনার পর দিন রাণী বেগমের বাবা বাদী হয়ে নিয়ামতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্ত শেষে নিয়ামতপুর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার নথি, ১৬ জন সাক্ষীর জেরা এবং জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে স্ত্রী রাণী বেগমকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইকবাল জামিল চৌধুরী এবং আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী আতিকুর রহমান।
সরকারি কৌঁসুলি ইকবাল জামিল চৌধুরী এই রায়কে ‘যুগান্তকারী’ উল্লেখ করে বলেন, “এর ফলে সমাজে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা ও নির্যাতনে প্রবণতা কমে যাবে। এই রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে।”
তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবী এই রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।