নওগাঁ

নওগাঁয় স্কুলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুলের জমি ও পুকুর লিজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও অভিভাবকরা বলছেন, প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের টাকা লিজ বাবদ আদায় হলেও তা স্কুলের উন্নয়নে ব্যবহার হচ্ছে না, বরং শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তারা।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর সেই শিক্ষা যারা প্রদান করেন তাদের বিরুদ্ধেই উঠেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক **মনিরুল ইসলামের** বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মানুষের স্কুলের নামে দানকৃত কিছু জমি ও পুকুরের লিজ দিয়ে সে টাকা আত্মসাৎ করছেন প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, “স্কুলের জায়গা আমাদের বাপ দাদার দানকৃত। তাছাড়াও খতিয়ানভুক্ত স্কুলের নামে কিছু জমিও পুকুর রয়েছে। পুকুর ও জমির লিজের টাকা কোন খাতে ব্যয় হয় এ বিষয়ে আমরা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমাদের কোন সদুত্তর দেননি এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বারবার এড়িয়ে যান।”

স্কুলের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করা এক ব্যক্তি **ক্যাপাস** জানান, “আমি এ বছর **৩৫ হাজার টাকা** দিয়ে স্কুলের দুই বিঘা জমি ডাকের মাধ্যমে বর্গা নিয়ে চাষ করছি। আমার জানা মতে স্কুলের নামে পুকুরসহ ৫ থেকে ৭ বিঘা জমি আছে। সেসব জমিও পুকুর ডাকের মাধ্যমে লিজ দেওয়া হয়। আর লিজ দেওয়া টাকা প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে থাকে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমুলিয়া গ্রামের দুইজন প্রবীণ ব্যক্তির কাছ থেকেও উক্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তারা বলেন, “প্রতিবছর লিজ থেকে প্রায় **চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা** আদায় করা হয়। সেই টাকার কোন কাজে ব্যয় করা হয় তা আমরা জানি না। স্কুলের টাকা আয় ও ব্যয়ের হিসাব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি ভালো জানেন।” তারা আরও বলেন, “স্কুলে টয়লেট নষ্ট, দালানের প্যালেস্টার খসে পড়ছে, দেওয়ালের রং উঠে গেছে, ছেলে-মেয়েদের রুমের সমস্যা, শিক্ষকরা মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দেন।”

গ্রামবাসী বলেন, “স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক কোনোদিন আমাদের স্কুলের জমি ও পুকুরের লিজ দেওয়া টাকার হিসাব দেননি। আমরা চাই স্কুলের টাকা স্কুলের কাজে লাগুক, কেউ যেন সে টাকা লুটপাট করে খেতে না পারে।” স্কুলের টাকা লুটপাট ঠেকাতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান।

শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক **মনিরুল ইসলাম** বলেন, “আমি স্কুলে যোগদানের পর থেকে স্কুলের যতটুকু কাগজ পেয়েছি তার হিসাব আমার কাছে আছে। আর এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য **সেলিম** ও **স্বাধীন** তারাই বেশি ভালো বলতে পারবে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সে অভিযোগ মিথ্যা।”

এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার **মাযহারুল ইসলাম** বলেন, “স্কুলের সম্পদ ব্যক্তিগতভাবে লিজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর স্কুলের নামে সম্পদ রয়েছে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাদের কিছুই জানাননি এবং স্কুলের শিক্ষকরা মাঝে মাঝে দেরিতে স্কুলে আসেন এ বিষয়েও আমি অভিযোগ পেয়েছি।”

জেলা শিক্ষা অফিসার **সাইফুল ইসলাম** বলেন, “এ বিষয়ে আমরা আগে জানতাম না। তবে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য আমরা তদন্ত টিম পাঠাবো। কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker