নওগাঁ

নওগাঁয় ধানের ভালো ফলনেও হাসি নেই চাষিদের মুখে

নওগাঁয় চলতি মৌসুমে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এবছর অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালার কম থাকায় ধানের ভালো ফলনে চাষিদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল হাসির ঝিলিক। তবে সেই হাসির ভাঁজে আছে দুশ্চিন্তার ছায়া। ধানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ হিসাব করে চাষিরা লাভবান হতে পারছে না।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বোরো ধানের। যেখান থেকে ধান প্রায় ১২ লাখ ৮৬ হাজার টন আর চাল ৮ লাখ ৭২২ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা।

সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী ধানের শীষে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠে মাঠে পাকা ধানে মৌ মৌ গন্ধ। বৈশাখের তপ্ত রোদে কষ্টের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে চাষিদের নেই কোনো ক্লান্তি। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় দ্রুত ফসল ঘরে তোলার তোড়জোড় কৃষক-কৃষাণীদের। তবে ফলন ভালো হলেও হাসি নেই চাষিদের মুখে।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক, সেচসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বাবদ ফসল উৎপাদনের খরচ হয়েছে বেশি। ধারদেনা আর ঋণ করে আবাদ করায় ঘরে উঠানোর আগেই বাজার বা বাড়ির উঠান থেকেই বিক্রি করতে হচ্ছে কষ্টে ফলানো ধান। আর এই সুযোগে মৌসুমি কিছু ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধান কিনছে। শুরুতে ধানের ভালো দাম থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে মনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই ধানের ফলন ভালো হলেও শঙ্কা দেখা দিয়েছে নায্যমূল্যে পাওয়া নিয়ে। এতে করে লাভবান হতে পারছেন না চাষিরা। এজন্য ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিতে সরকারের তদারকি বাড়ানোর দাবি কৃষকদের।

Image

নওগাঁ সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, ৩ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ হিসাব করলে ধানে লাভ হবে না। এরপরও কৃষকদের ধানের আবাদ করতে হয় তাই করি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২২ থেকে ২৪ মণ। প্রতি মণ ধানের দাম এখন ১০৫০ থেকে ১১৫০টাকা।

একই গ্রামের কৃষক রহমত উদ্দিন বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবাদে খরচ বেড়েছে। প্রতি বিঘায় সব মিলে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। নিজের পরিশ্রম তো আছেই। কিন্তু বাজারে বা বাড়ির উঠানে আমরা ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পাচ্ছি না। কিছু ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে ধানে কিনছে। আমাদের দুঃখ দুর্দশা কেউ দেখে না।

রানীনগর উপজেলার মিরাট গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, এবছর ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কাটারি জাতের ধান আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ মণ। শুরুতে ধানের দাম ভাল ছিলো। কাটারিভোগ ১৩৫০ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই ধান এখন মনে ২০০-২৫০ টাকা দাম কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমনিতেই বর্গা নিয়ে আবাদ করেছি, এরমধ্যে ধানের দাম এরকম থাকলে লোকসান গুনতে হবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনুকুল আবহাওয়া থাকায় ধানে রোগ-বালাইয়ের পরিমাণ কম ছিল। এতে করে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাবে এবং লাভবান হবে। এরইমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুকিঁ এড়াতে জমির ধান ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলেই চাষিদের কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Author

মো: খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ প্রতিনিধি

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker