সরিষাবাড়ী

চলে রান্নার কাজও: বেহাল দশায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার গুলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলোতে গ্রন্থাগারিক থাকলেও বেহাল দশায় পড়ে আছে অধিকাংশ গ্রন্থাগার (লাইব্রেরি)।

গ্রন্থাগারিক গ্রন্থাগারে না বসে শ্রেনীকক্ষে পাঠদান করেন। কোন কোন গ্রন্থাগারের আলমারিতে গুটি কয়েক বই থাকলেও সেগুলোর স্তরে স্তরে ধুলোবালু জমেছে। একই কক্ষে গ্রন্থাগার, শিক্ষক মিলনায়তন। চলে রান্না-বান্নার কাজ। যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে উপজেলার সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামেরপাড়া ফিরোজা মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বনগ্রাম মানিক উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও শিবপুর এসএইচএস উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে গ্রন্থাগার আর গ্রন্থাগারিক নিয়ে জানা গেল নানা তথ্য।

সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। যোগদানের পর থেকে কখনোই গ্রন্থাগারে সরকারি কোনো অনুদান পাননি। দুই বছর আগে ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে হাজার দুয়েক টাকার বই কিনে আনেন তিনি।

বিদ্যালয় ভবনে গ্রন্থাগার চোখে না পড়ায় প্রধান শিক্ষকের সাহায্য নিই। তিনি তাঁর কক্ষের পাশে অন্য একটি কামরায় নিয়ে যান। অগোছালো একটি কক্ষ। সেখানে পাঠকদের জন্য নেই কোন বসার ব্যবস্থা, পড়ার পরিবেশ। একটি টেবিলের ওপর দ্বিমুখী গ্যাসের চুলা বসানো। রান্নার সরঞ্জাম দেখে যে কেউ বলবে এটি লাইব্রেরি নয়, রান্নাঘর। অপরপাশে সারি করে রাখা কয়েকটি চেয়ার। প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকরা সেখানে বসেন। এই কক্ষকে শিক্ষক মিলনায়তন হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক।

এমন পরিবেশে পাঠক হিসেবে কোনো শিক্ষার্থী সে কক্ষে আসা-যাওয়া করে না। প্রতিদিন শিক্ষকদের দুপুরের খাবার এ কক্ষেই রান্না করা হয় বলে বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষক জানান। ওই কক্ষের এক কোনায় দুটি আলমারির একটিতে হাতেগোনা কয়েকটি বই। তাতে স্তরে স্তরে ধুলোবালি পড়ে আছে। দেখে মনে হয়-অনেকদিন ধরে বইগুলোতে কারো হাত পড়েনি।

গ্রন্থাগারিক নুসরাত জাহান জানান, ‘গ্রন্থাগারে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই গ্রন্থাগারে সময় না দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করি। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা এখন পাঠ্যবই পড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।

শ্যামেরপাড়া ফিরোজা মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল একই চিত্র। একই কক্ষকে গ্রন্থাগার ও শিক্ষক মিলনায়তন। সেখানে চলে রান্না-বান্নার কাজও। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ এখন আর গ্রন্থাগারে আসে না। অতিমারি করোনার কারনে শিক্ষার্থীরা তেমন পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। তাই তারা গ্রন্থাগারে না এসে পাঠ্যবই নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকছে বলে প্রধান শিক্ষক সুরুজ্জামান জানান। এ প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারিক আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে বিনা বেতনে গ্রন্থাগারিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বনগ্রাম মানিক উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে একই কক্ষে বসেন প্রধান শিক্ষক। সেখানেই গ্রন্থাগার, শিক্ষক মিলনায়তন। চলে রান্না-বান্নার কাজ। নতুন ভবন নির্মান কাজ চলমান থাকায় গ্রন্থাগারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক চামেলী ইয়াসমিন। গ্রন্থাগারিক আশরাফুন নাহার বলেন, গ্রন্থাগারের কার্যক্রম না থাকায় শ্রেনীকক্ষে পাঠদান করছি।

শিবপুর এসএইচএস উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাহারে আলমারি ভর্তি বই দেখা গেলেও নেই কোন পাঠক। প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদ আলী জানান, শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে গেলে আর ফেরৎ দেয় না। এভাবে তার গ্রন্থাগারের বেশ কিছু বই হারিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা এখন পাঠ্যবই নিয়ে ব্যস্ত। এ কারনে বই নিতে কেউ আসে না। রেজিস্টার খাতা ব্যবহার করা হলেও গ্রন্থাগারের বই হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন গ্রন্থাগারিক আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া।

শুধু সেঙ্গুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামেরপাড়া ফিরোজা মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বনগ্রাম মানিক উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও শিবপুর এসএইচএস উচ্চ বিদ্যালয়ই নয়। উপজেলার প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারের চিত্র প্রায় একই।

এ-বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান রয়েছেন, সেখানে লাইব্রেরির কার্যক্রম চালানো বাধ্যতামূলক।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker