জীবিকার তাগিদে করতে হয় কত না কাজ। আর সেই কাজের জন্য মানুষের জীবন হয় সংশয়। গত পাঁচ বছর পূর্বে তেমনি একটি কাজ করতে গিয়ে ইলেকট্রিক শর্টে শরীলে দুটি হাত হারিয়ে ফেলেন জামালপুরের সরিষাবাড়ীর খোকন মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরবালিয়া গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিনের ছেলে।
সাম্প্রতিক ফেইজবুক মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে প্রযুক্তির তৈরি একটি কৃত্রিম রোবটিক হাত পেয়ে এখন অনেক খুশি খোকন মিয়া। গত রবিবার সকালে সেই (রোবট) কৃত্রিম হাত দেখার জন্য খোকন মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোররা।
স্থানীয় ও পরিবারের সুত্রে জানা যায়, তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। ২০১৭সালের অক্টোবর মাসে চরবালিয়া গ্রামে অন্যের বাড়ীতে ছাদ বিল্ডিং এর কাজ করা সময়, ১১হাজার ভোল্টেজ লাইনে ইলেকট্রিক শর্টে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখনই তার দুটি হাত কেটে ফেলতে হয়। পুড়ে যায় শরীলের বিভিন্ন অংশ। অনেক অর্থ খরচ করে সুস্থ্য হন খোকন মিয়া। বর্তমানে তার সংসারের রয়েছে ২টি সন্তান স্ত্রী ও বাবা মা। সংসারের উপার্জনের এক মাত্র অবলম্ব ছিলেন খোকন। দুটি হাত চলে যাওয়াতে করতে পারেনা কোন কাজ। সংসারে নেমে এসেছে কষ্টের ছাঁয়া। পাঁচ বছর যাবত অন্যের সহযোগীতা নিয়ে করতে হচ্ছে জীবন পার। সাম্প্রতিক প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে ইলেকট্রিক মেশিনের একটি হাত বানিয়েছেন তিনি। সেটা দিয়ে কোন রকম চলাচলের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন।
খোকন মিয়ার বাবা মনির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার পর নিজের যা জমি জমা ছিলো সেটা বিক্রয় করে প্রায় ১২লক্ষটাকা খরচ করে চিকিৎসা করেছি। এখন আর আমাগোরে সংসার চলে না। প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় ছেলেডা একটি হাত বানিয়ে নিয়ে আইছে। আরেকটা হাত হলে ওর জন্য চলাচল সহজ হবে।
হাত হারানো খোকন মিয়া বলেন, ভালোই ছিলাম আমি। আল্লাহতালা দুটি হাত নিয়ে গেলো। এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া আমি চলতে পারি না। একটি কৃত্রিম হাত ঢাকার জয় বড়ুয়া লাভলু নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে বানিয়ে এনেছি। গত শুক্রবার সকালে সেই হাত লাগিয়ে বাড়িতের নিজের কিছু কাজ করি। তবে আরেকটি হাত হলে আমার জন্য অনেক সুবিধা হবে। অনেক টাকা লাগে বানাতে। আমি সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগীতার আবেদন জানাই।
উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর ধরে খোকন অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। সকলের সহযোগীতায় একটি কৃত্রিম হাত বানিয়েছেন। আরেকটি হাত হলে তার জন্য উপকার হবে।
এ-ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, খোকন দুরর্ঘটনা দুটি হাত হারিয়েছে। খুবই কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন। গ্রামবাসীর সহযোগীতায় ঢাকা থেকে ইলেক্টিক একটি হাত বানিয়ে নিয়ে এসেছে। এখন কিছুটা হলেও নিজে চলতে পারবে।
এ-বিষয়ে রোবটিক হাত নির্মাতা জয় বড়ুয়া লাভলু জানান, খোকন মিয়ার দুটি হাতই কাটা। তার সামর্থ্যের মধ্যে একটি কৃত্রিম রোবট হাত বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সেই হাত দিয়ে করতে পারবে।