জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চতুর্থ ধাপ ইউপি নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে দুই পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে আসাদুজ্জামান আসাদ নামে (৫৫) একজন নিহত হয়েছেন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ সময় ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হল: রিপন মিয়া, মজনু মিয়া, জালাল উদ্দিন, নজরুল ইসলাম ও আমীর হোসেন। উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের প্রসাদপুর ও হাসড়ামাজালিয়া এ দুই গ্রামের মধ্যে ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রসাদপুর গ্রামের পরাজিত প্রার্থী (ফুটবল) এনামুল হক মন্টু সঙ্গে হাসড়া মাজালিয়া গ্রামের অপর পরাজিত রহমতুল্লাহ (ঘুড়ি) বিরোধ চলে আসছিল।
এর আগে রহমতুল্লাহর সমর্থক হবি তার ভাই নুরুল ইসলামের জমির মাটি বিক্রি করেন প্রতিবেশী সাদ্দামের কাছে। এ জমি থেকে মঙ্গলবার ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কেঁটে একই এলাকার আবুল হোসেনের আবাদি জমির মধ্যে দিয়ে আনতে ছিল। সেই এলাকার ১১ জন হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ি তৈরি করার জন্য সেই মাটি নিয়ে যায় ট্রাক্টর দিয়ে। এ সময় পরাজিত প্রার্থী (ঘুড়ি) রহমতুল্লাহর সমর্থক আবুল হোসেনসহ ২০-২৫ জন ব্যক্তি বাধা দেয় এবং হিন্দু সম্প্রদায়ে লোকদের হুমকি দেয়।
তারা বলে, “তোমরা হিন্দুরা ঘুড়ি মার্কায় ভোট দেওনি। তোমাদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারবো।” এ নিয়ে সকাল থেকেই উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে আসছিল। এ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলাকালে মন্টু মিয়ার সমর্থকের হিন্দু ব্যক্তির দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে রহমতুল্লাহ সমর্থকরা।
এ নিয়ে উভয় সমর্থকরা লাঠিসোটা, হকিষ্টিক, রামদা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষ চলাকালে রহমতুল্লাহর সমর্থক আসাদুজ্জান আসাদ গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্মরত ডাক্তার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। তার মৃত্যু ঘটনা তাৎক্ষণিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আহতরা হলেন- মোস্তাক আহমেদ (৩৫), নজরুল ইসলাম (৪৫), সাদ্দাম আলী (৩০), রেবা খাতুন (৩৮), জালাল উদ্দিন (৭০), হানী (৩৫), লিটন (১৮), মেহেদী হাসান লিটু (৩০), রেজু (৪০), চাঁন মিয়া, আমির হোসেন(৩৫), মজনু মিয়া(৪০), হুরমুজ আলীসহ দুইপক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহতদের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এ খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানার পুলিশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়। এ সময় সংঘর্ষে আহত চিকিৎসা নিতে আসা ব্যাক্তিদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর রকিবুল হক জানান, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর দুইজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহ নেয়ার পথে আহত আসাদুজ্জামান আসাদ নামে একজন মারা যান। এ সংবাদ পেয়ে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।