জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে টাকা না দেওয়ায় নির্মমভাবে নির্যাতন করে নুরজাহান আক্তার সাথী (২৫) নামে এক গৃহবধূকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড স্বামী রনি তালুকদার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। গত তিন দিন যাবত ঐ গৃহবধূ সরিষাবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের তারাকান্দি কান্দারপাড়া বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এঘটনা ঘটে।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে ভুক্তভোগীর অভিযোগ সুত্রে হাসপাতাল ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ১৪ মাস পূর্বে পোগলদিঘা ইউনিয়নের বগারপাড় গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে নুরজাহার আক্তার সাথী’র সাথে একই ইউনিয়নের কান্দারপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল তালুকদারের বড় ছেলে মো. রনি তালুকদার এর বিয়ে হয়।
দাম্পত্য জীবনে তাদের দুজনের এটি দ্বিতীয় বিবাহ। বিবাহের পর থেকেই দুইজনের মধ্যে সাংসারিক ঝামেলা সৃষ্টি হয়। রনি তালুকদার পেশায় একজন বাস চালক। তারা দুজনেই স্থানীয় জুলফিকার নামে এক দোকানদার মালিক এর বসতবাড়িতে বাসা ভাড়া থাকতেন।
এদিকে বুধবার রাতে রনি তার স্ত্রী সাথী বেগমের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য টাকা চায়। অন্যথায় ব্যাংক থেকে লোন করে অথবা বাপের বাড়িতে চাইতে বলে। সাথী বেগম টাকা দিতে অস্বীকার জানালে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে রনি তালুকদার ও তার পরিবারের লোকজন।
এপর্যায়ে ভাড়াটিয়া বাসার মালিকের রোমে আত্মরক্ষায় লুকিয়ে পড়লে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে ভেড় করে রক্তাক্ত করা হয় গৃহবধূ সাথীকে। পরে ”৯৯৯” সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ নুরজাহান আক্তার সাথী বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, দেবর পরিবারের সবাই তাকে মারধর করে। একটা এনজিওতে চাকরি করতাম বেতনের সব টাকা তাদের পরিবারে দিয়েছি। এখন চাকরি নেই, কেউ দেখতে পারে না। দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে রনির কাছে বিয়ে দিয়েছে আমার বাবা।
কিন্তু রনি সব সময় নেশা করে, আর আমার কাছে টাকা চায়। টাকা না দিলে পিটানো শুরু করে। শারিরীক নির্যাতনের ফলে আজ আমি একেবারেই দুর্বল। কখন যেন স্বামীর আঘাতে আমার মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি থানাতেও অভিযোগ দিবো। সঠিক একটা বিচার চাই আমি।
বাসার মালিক জুলফিকার বলেন, ৩ মাস যাবত বাসা ভাড়ার নেওয়ার পর থেকে দুজনের মধ্য ঝগড়া হতো। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে কেন্দ্র করে রনি আমার ঘরের দরজা ও ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। তবে সাথী মেয়ে অনেক লক্ষী মেয়ে। সে অনেক কষ্ট করে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালাতো।
এ বিষয়ে শ্বশুর মোফাজ্জাল তালুকদার বলেন, ‘ছেলে বউ নিয়ে আলাদা ভাবে অন্য জায়গাতে বাসা ভাড়া করে থাকে। তাদের মধ্যে কেন মারামারি হয় সেটা আমরা জানি। তবে ছেলের বউটা খুব রাগি এবং ঝগরাটে। এঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রনি তালুকদার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গাড়ি চালক গাড়িতে আছি।
পরে এ বিষয়ে কথা বলবো। এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মো. চাঁদ মিয়া বলেন, ‘এঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।