সভ্যতায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, যুগের পর যুগ অতিবাহিত হলেও আধুনিকতার ছোঁয়াতে এখনও হয়নি একটি সেতু। অবশেষে দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাঠের সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন এলাকাবাসীরা। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চুনিয়াপটল গ্রামে (মঈন উদ্দিন খেয়া ঘাটে) ঝিনাই নদীর উপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে নির্মাণ হচ্ছে এই সাময়িক কাঠের সেতুটি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য ঝিনাই নদীর ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হচ্ছে কাঠের সেতু। লম্বায় ৩৩০ ফিট এবং পাশ ৮ ফিট। যার ব্যয় খরচ হিসেবে ধরা হয়েছে ১০-১২ লক্ষ টাকা। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত মানুষ স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে থাকে এই সেতু নির্মাণ কাজে। সাতপোয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর দুইপাশে রয়েছে-চর রৌহা বাজার, চুনিয়াপটল, চর আদ্রা, বড় আদ্রা, চর নান্দিনা, ডাকাতিয়া, বড়বাড়ীয়া, কান্দার পাড়া, সিধুঁলী, হাটবাড়ী, সিংগুরিয়া ও ছাতারিয়া, ডিগ্রীপাচ বাড়ীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামে প্রায় ২৫-৩০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করে। এইপাড় থেকে ঐপাড়ে যাওয়ার এক মাত্র ঘাট (চররৌহা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন) মঈন উদ্দিনের খেয়া ঘাটের নৌকা পথ।
ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আলম স্বপন জানান, যুগের পর যুগ পার হচ্ছে কিন্তু আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এই নদীর উপর একটি সেতু না থাকায় দুইপারের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের চরম দূর্ভোগ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয়, নদীর ওপারে রয়েছে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, হাট-বাজার। যা পার হয়ে যেতে অনেক কষ্ট ও সময় অপচয় হয়। তাই গ্রামবাসীর উদ্যোগে সাময়িক হিসেবে গত ১ মাস ধরে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটা চাওয়া, এই নদীর উপর স্থায়ী একটি সেতু তৈরি করে দেওয়া হোক।
ভুক্তভোগী খোকা ফকির বলেন, এই ঘাটে একটি সেতুর জন্য কত কি না করছি। কত ধরণের নেতাদের পিছনে আমরা গ্রামবাসী ঘুরেছি। তবুও স্বপ্নের একটি সেতু পেলাম না। আমরা একটি সেতু চাই।
ঘাট চালানোর প্রতিষ্ঠাতা মঈন উদ্দিন বলেন, বয়সতো কম হলো না, বিগত ৫০ বছর এখানে আমি নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করেছি। এখন আমার আর শক্তি নেই। বড়ই কষ্টের কথা, যুগের পর যুগ পার হলেও একটি সেতু হলো না এই ঘাটে। একটি সেতু খুবই প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সাতপোয়া ইউপি সদস্য ফজলুল হক ফজল জানান, নদীর পার হয়ে কাজকর্ম করতে অনেক সমস্যা হয়। তাই আমরা চুনিয়াপটল গ্রামবাসী, প্রবাসী, চাকুরীজীবিদের আর্থিক সহযোগীতায় সবাই মিলে সকলের সুবিতার্থে সাময়িক ভাবে একটি কাঠের সেতু তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বর্ষার পানি পড়ার আগেই এই সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করা যাবে। জননেত্রী মমতাময়ী মা শেখ হাসিনা ও মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসানের কাছে আমাদের একটি চাওয়া, মানুষের কষ্ট লাঘবে এই ঘাটে যেন একটি স্থায়ী সেতু করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সাতপোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, চুনিয়াপটল মঈন উদ্দিন ঘাটে গ্রামবাসী পারাপারের সুবিধার্থে তাদের নিজ উদ্যোগে আর্থিক সহযোগিতায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করছেন, যা চলমান। ঐ ঘাটে একটি স্থায়ী সেতুর জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতায় এলজিইডিতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।