সংস্কারের বরাদ্দ দেয় এক মসজিদে আর উত্তোলন করেন অন্য মসজিদ
দুই সমাজের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি
কাগজ কলমে মসজিদ সংস্কারের সরকারি বরাদ্দ দেয় বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের নামে। আর সেই বরাদ্দ কৌশলে গ্রহণ করে নেন একই গ্রামের বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া (শাহী) জামে মসজিদের কমিটিবৃন্দরা। এই নিয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মহাদানের দুই সমাজের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও মারমুখী চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রবিবার (১১ মে) বিকালে উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকায় গিয়ে জানা যায় এমন তথ্য। এই নিয়ে যেকোন সময় দুই সমাজের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় সূত্রে জানান, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ম ও ২য় পর্যায়ের আওতায় উপজেলা পরিষদ ভিত্তিক বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ দ্বারা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় মহাদান ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ সংস্কারে নামে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এই বরাদ্দকৃত অর্থ একই গ্রামের পৃথক মসজিদ বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া শাহী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবু কৌশলে উত্তোলন করে।
পরে এই বিষয়টি বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সদস্যরা ও সমাজবাসী জানতে পেয়ে প্রতিবাদ করে এবং ওই বরাদ্দকৃত অর্থ তাদের মসজিদের জন্য ফেরত চায়। কিন্তু বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া শাহী জামে মসজিদ কমিটির সদস্যরা ও সমাজবাসী সেই অর্থ ফেরত দিতে অপারকতা প্রকাশ করে। এই নিয়ে কয়েকদিন যাবৎ একই গ্রামের দুই সমাজের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা মারমুখী অসন্তুষ্টি বিরাজ হয়েছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মত ঘটনা আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত রিপন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের সমাজের মসজিদটি সবচেয়ে পুরাতন এবং অবহেলিত। আমাদের মসজিদের নামে কোন বরাদ্দ এলেই তারা কৌশল করে তাদের মসজিদের জন্য নিয়ে যায়। পূর্বেও তারা এমনটিই করেছিল। এবারও করেছেন। আমরা সমাজবাসী তাদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে আমাদের মসজিদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত চাই। প্রশাসন দ্রুত এ অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে তারা দাবি জানান।
অপরদিকে বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া শাহী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘এই প্রকল্পের বিষয়ে ওই মসজিদ কমিটির সদস্যরা কিছুই জানতো না। আমরা ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলে আমাদের মসজিদের নামে প্রকল্পটা নিয়ে এসেছি। ইউপি চেয়ারম্যান একেএম আনিছুর রহমান জুয়েল ও ইউপি সচিব আব্দুর রহিম বিষয়টি অবগত আছেন। প্রকল্পে আমাদের মসজিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামই আছে। শুধু মসজিদের নামের সাথে শাহী শব্দটি ভুলবশত বাদ পড়ায় তারা টাকা দাবি করছে। এঘটনায় তারা অসামাজিক কথাবার্তা সহ হামলা মামলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা প্রশাসনের ন্যায় বিচার কামনা করছি।
এ ব্যাপারে মহাদান ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া সমাজ ভেঙে একাধিক সমাজ ও মসজিদ হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া কালীন সময় নামের বিষয়টি খেয়াল করা উচিৎ ছিল। যারা বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করেছে, তারাই মসজিদ সংস্কারের জন্য আবেদন করেছিল। ভুলবশত নামের জায়গায় একটি শব্দ বাদ পড়ে গেছে। একটু ধৈর্য ধরলেই আগামী বরাদ্দে তাদের মসজিদের নাম দেয়া যাবে। আমি সবাইকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শওকত জামিল মুঠোফোনে বলেন, এটা আমাদের ভুল নয়, সচিবের ভুল হতে পারে। উনি যদি সরেজমিনে গিয়ে তথ্যটা দিতেন, তাহলে এই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আগামী বরাদ্দে তাদের মসজিদের জন্য আমি ঊর্ধ্বতনের সাথে কথা বলবো। তবে এই নিয়ে বিবাদ করা সমচীন নয় বলেও তিনি জানান তিনি।