সাতক্ষীরার দেবহাটার পারুলিয়াতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট: দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসায় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায় কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খামারিরা খুশি হলেও, উচ্চ দামের কারণে বিক্রি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার পশুর হাট। কোরবানি উপলক্ষে পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনোভাবেই ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবির পক্ষ থেকেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া খামারিরা এবার গরু মোটা-তাজাকরণে ওষুধ প্রয়োগ থেকেও বিরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সাতক্ষীরায় সব চেয়ে বড় পশুরহাট এই দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ায়। সপ্তাহে একদিন রোববার পারুলিয়ার হাট বসে। এই হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যক গরু, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও বিক্রি কম।
দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। তবে হাটগুলোতে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার বড় গরু কিনতে বেশি আগ্রহী নন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকটি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারিরা। হাটে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার এবং বড় সাইজের খাসি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
স্থানীয় খামারিরা বলছেন, “এবার পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচাঘাস, খৈল, চিটাগুড়, বিচলী, ভুষি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।” তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তারা আরও বলেন, “কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমে গেছে।”
তারা দৃঢ়তার সাথে বলেন, “তবে, কেউ লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করবে না। ক্রেতারা এখন কিনলে কিছুটা কমে কিনতে পারবেন। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই কিনতে হবে।”
সাতক্ষীরা সদরের কাশেমপুর থেকে আসা গরু ও ছাগল খামারি কামরুজ্জামান টুটুল জানান, “আমি কয়েক বছর ধরে গরু ও ছাগল পালন করি, পশুর খাদ্য দাম বেশি হওয়ায় কোরবানি উপলক্ষে এবার কয়েকটি গরু ও ৪০টি ছাগল পালন করেছি।” তিনি বলেন, “আমার খামারে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত সব সাইজের দেশি গরু আছে। আর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির খাসি ছাগল আছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি হওয়ায় ক্রেতার উপস্থিতি কম।”
হাটে আসা এক ক্রেতা বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম একটু বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা দেশি গরুর দাম একটু বেশি হাঁকাচ্ছেন। যে কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকলেও সে তুলনায় বিক্রি কম। তবে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর এবার চাহিদা বেশি। সেই সঙ্গে ছাগলের বিক্রি তুলনামূলক বেশি।”