শার্শায় ভ্যান থামিয়ে হতদরিদ্রের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির চাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ
যশোরের শার্শা উপজেলায় সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত হতদরিদ্রদের চাল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হতদরিদ্র নারীরা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা ২টার দিকে যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়নের ধলদা মোড়ে এই চাল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভিডব্লিউভি (Vulnerable Group Development) তালিকাভুক্ত প্রত্যেক নারী সদস্যকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ বস্তা করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্ত চাল নিয়ে ভ্যানযোগে নিজ দায়িত্বে বাড়িতে যাওয়ার সময় ধলদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ইয়ানুর, রাজ্জাক বিশ্বাসের ছেলে মিজানুর বিশ্বাস, সুরত আলীর ছেলে মশিয়ার এবং আতিয়ার বিশ্বাসের ছেলে রফিকুল ভ্যান থামিয়ে দুই থেকে তিন বস্তা করে চাল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, ছিনতাইকারীরা সবাই শার্শা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান নেদার ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী বলেন, “আমাদের হাতে ৩ বস্তা চাল তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ধলদা মোড়ে তারা পথ আটকায়। বাধ্য হয়ে ১ বস্তা চাল দিয়ে দিতে হয়। কেউ কিছু বললে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়।” আরেক নারী বলেন, “সরকার আমাদের যা দিচ্ছে, সেটুকু নিয়েও যদি এভাবে ভয়ভীতি আর লুটপাট হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো? গরিবের প্রাপ্য জিনিসও কেড়ে নিচ্ছে তারা।”
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে না চাইলেও, একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। তবে প্রশাসনের তদন্ত ও হস্তক্ষেপ খুব জরুরি।”
অভিযুক্ত ইয়ানুর, মশিয়ারসহ অন্যরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও চাল ছিনতাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, হতদরিদ্রের চাল পরিষদ থেকে নিয়ে যাওয়ার পথে কেউ নিয়ে নিলে সেটা ছিনতাই হয়। তিনি শার্শা থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম রবিউল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, এই ধরনের লুটপাট সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে এই সহায়তা কার্যক্রম আরও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।