এবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদের ফেসবুক আইডিতে ‘Stepdown Hasina’ স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ থেকে সেতাব মাহমুদকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে।
এ ছাড়া গত ২৬ জুলাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ ও চার যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন।
ওই কমিটির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক রুমান খান ২৭ জুলাই তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেন ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ।’ এ বিষয়গুলো মির্জাপুরে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
এদিকে সোমবার (৩১ জুলাই) ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ মির্জাপুর থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে এবং হ্যাকার গ্রুপ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ বিরোধী স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলার হীনচেষ্টা করছে।
জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদের ফেসবুক আইডিতে #stepdown Hasina’ লিখে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। বিষয়টি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে ওই লেখার স্ক্রিনশট দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পাশাপাশি সেতাব মাহমুদের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে সেতাব মাহমুদের আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (২৬ জুলাই) উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, সাফি আহমেদ সীমান্ত, শুভ আহমেদ ও মারুফ রহমানের সই করা দলীয় প্যাডে রুমান খানকে আহ্বায়ক, চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ১৭ জনকে সদস্য করে তিন মাসের জন্য বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে অন্য তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ, জিহাদ হাসান ও ফয়সাল শিকদার স্বাক্ষর করেননি।
নবনির্বাচিত আহ্বায়ক রুমান খান ২৭ জুলাই বিজয় মিছিলের একটি ছবি তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। সেখানে লেখেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ’।
এ বিষয়টিও মির্জাপুরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ, জিহাদ হাসান ও ফয়সাল শিকদার জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির একাংশ বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। তৃণমূল ছাত্রলীগ তাদের সঙ্গে নেই। পাল্লা ভারি করতে অছাত্র ও অপ্রাপ্তদের দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন তারা। এ ছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদের বাবা, চাচারাসহ আত্মীয়রা বিএনপির সমর্থক। যা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে পত্রের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও জেলা ছাত্রলীগকে অবগত করেছেন। সেতাব মাহমুদ তার ফেসবুক আইডিতে গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় #stepdownHasina’ লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে। আমরা তার আজীবন বহিষ্কার দাবি জানাচ্ছি।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্যোবিদায়ি কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন খান বলেন, একজন ছাত্রলীগ নেতা কিভাবে আপত্তিকর #stepdownHasina’ লিখে স্ট্যাটাস দেন আমার বোধগম্য নয়। যা ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের শিষ্টাচারবহির্ভূত। এতে কোনোভাবেই তার পদ-পদবি থাকতে পারে না। এর আগে গত ২৬ জুলাই তাদের অনুমোদিত বহুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রুমান খান তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিন্দাবাদ’। আমরা তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযাগ করা হলে তিনি জানান, ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় হ্যাকার গ্রুপ আমার ফেসবুক আইডি হ্যাকিং করে সাত-আটবার #stepdownHasina লিখে স্ট্যাটাস দেয়। বিষয়টি আমার নজরে এলে আমি সঙ্গে সঙ্গে তা ডিলিট করি। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে আমাকে বেকায়দায় ফেলার হীনচেষ্টা মাত্র। ৩১ জুলাই এ বিষয়ে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। অশিক্ষিত অরাজনৈতিক ও অযোগ্য ব্যক্তিকে ছাত্রলীগ বানিয়ে পদ-পদবি দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আমি উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্তের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।