টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়ন (পূর্ব) ছাত্রলীগের পাল্টা-পাল্টি কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এই পাল্টা-পাল্টি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও চারজন যুগ্ম আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত এবং তিনজন যুগ্ম আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে এই কমিটি অনুমোদন দেন। এ নিয়ে ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে সদ্য বিদায়ি কমিটির নেতাকর্মীরা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। কমিটি ঘোষণার চার ঘণ্টা পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনতান্ত্রিক নিয়ম ও বিধি অনুসরণ না হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে মির্জাপুরের রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।
পরে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ এই তিন ইউনিটে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
গত ২১ জুন উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর একটি পত্র দেন। পত্রে সেতাব মাহমুদের পিতা আনিছুর রহমান একজন বিএনপির সমর্থক ও তার চাচা বিএনপি নেতা। এ ছাড়া ওই পত্রে সেতাব মাহমুদ নেশাগ্রস্ত, মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং এর নেতা বলে উল্লেখ করা হয়।
তাকে যেন ছাত্রলীগের কোনো পদে অধিষ্ঠিত করা না হয় তা উল্লেখ করেন।
পত্রটি পাওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরিম হোসেন সীমান্ত বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত গত ২৪ জুন দলীয় প্যাডে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি পত্র পাঠান। ওই পত্রে সেতাব মাহমুদকে ছাত্রলীগের কোনো পর্যায়ের কোনো কমিটিতে নেতা নির্বাচিত না করার জোর সুপারিশ করেন।
গত ৭ জুলাই সেতাব মাহমুদকে আহ্বায়ক, সাতজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪১ জনকে সদস্য করে তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন জেলা ছাত্রলীগ।
একই দিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত দলীয় দুই প্যাডে আগামী এক বছরের মেয়াদের জন্য মির্জাপুর পৌর কমিটিতে শামীম ওসমান শিশিরকে সভাপতি ও আতিকুল ইসলাম আতিককে সাধারণ সম্পাদক এবং শাহরিয়া নাহিদকে সভাপতি ও সায়মন ইসলাম ইফতিকে সাধারণ সম্পাদক করে মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ শাখার কমিটি অনুমোদন দেন।
গত শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদের নেতৃত্বে গোড়াই ফ্লাইওভারের নিচে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদের নেতৃত্বে গোড়াই মাইক্রোবাস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গোড়াই ইউনিয়ন (পূর্ব) ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১৩ জুলাই সেতাব মাহমুদের নেতৃত্বে মির্জাপুর ক্লাবে এবং ওয়াকিল আহমেদের নেতৃত্বে মির্জাপুর প্রেস ক্লাবে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার বিকেলে আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, শাফি আহমেদ সীমান্ত, মারুফ রহমান ও শুভ আহমেদ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ৯ সদস্য বিশিষ্ট এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ, জিহাদ হাসান ও মো. ফয়সাল সিকদার স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট গোড়াই ইউনিয়ন (পূর্ব) ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াকিল আহমেদ জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং বিবাহিতদের পদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত ছাত্র নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এজন্য আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছি।
মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ জানান, গত ১৩ জুলাই উপজেলা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় কমিটির সবাইকে ডাকা হয়েছিল। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে ৯ সদস্য বিশিষ্টম গোড়াই ইউনিয়ন (পূর্ব) ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু কয়েকজন না এসে পৃথক সভার মাধ্যমে তারা কমিটি ঘোষণা করেছে।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, মির্জাপুরে শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সকল সংগঠনে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।