টাঙ্গাইল

যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি কমলেও বিপৎসীমার ওপরে টাঙ্গাইলের পাঁচ উপজেলার ৩৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি

আব্দুস সাত্তার,প্রতিনিধি,টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইল সদর,কালিহাতী,ভূঞাপুর,গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার ৩৬ হাজার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোমবার(৮ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও অপরিবর্তিত,আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, হাট-বাজার ও ফসলি জমি।

Image

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা) যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি সামান্য কমলেও অন্য সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েণ্টে ৩ সেণ্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেণ্টিমিটার ও ঝিনাই(নিউ ধলেশ^রী) নদীর পানি জোকারচর পয়েণ্টে ৩ সেণ্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯৭ সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েণ্টে বিপৎসীমার ২৪ সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে ফটিকজানি নদীর পানি নলছোপা পয়েণ্টে ১৭ সেণ্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েণ্টে ৮ সেণ্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েণ্টে ৯ সেণ্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েণ্টে ১২ সেণ্টিমিটার বেড়েছে।

জেলার প্রায় সব নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ভূঞাপুর,গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জেলার মির্জাপুর, বাসাইল ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও বন্যা আগ্রাসী হাতছানি দিচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার সড়ক ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

পানির তীব্র শ্রোতে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। জেলারা পাঁচটি উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়ে আউশ ধান, পাট, তিল ও নানা ধরণের সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদি পশুগুলো খাবার সঙ্কটে ভুগছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূঞাপুর, কালিহাতী,টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

Image

জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুণা, গাবসারা ও নিকরাইল ইউনিয়নের ১২-১৪টি গ্রামসহ পুরো চরাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরাঞ্চলের অনেকে নৌকায় বা স্বজনদের বাড়ি ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় চরকয়েড়া,কয়েড়া,আকালু,নলুয়া বেশ কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে আউশ ধান, পাট, তিল ও সবজি ক্ষেত রয়েছে। পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে কৃষকরা মানাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এর আগে গত রোববার(৭ জুলাই) বিকালে ভূূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে বন্যা কবলিত অসহায়দের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির ও জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম প্রমুখ।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সাজ্জাদ হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের প্রায় সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা, ঝিনাই ও ধলেশ্বরীর পানি সামান্য কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও দুই দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ভাঙন এলাকায় জরুরি পরিষেবা হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে বন্যায় জেলায় ৩৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা সামগ্রী হিসেবে চাল, ডাল, তেল, চিনি, মসলা সহ সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের প্যাকেট,  পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানির পাত্র বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান,বন্যা একটি প্রাকৃতিক সমস্যা। বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া আছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker