আবহাওয়া ও জলবায়ুটাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে তীব্র শীতে দুই শিশুর মৃত্যু: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি

আব্দুস সাত্তার, বিশেষ প্রতিনিধি:

উত্তুরে হিমেল হওয়া ও ঘন কুয়াশায় টাঙ্গাইল জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বইছে।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কনকনে শীতে এরই মধ্যে পাঁচ মাস বয়সী দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দিনভর শীতের তীব্রতা থাকায় জনজীবন এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ-ই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক মো: কায়ছারুল ইসলাম সাধারণ ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসক মো: কায়ছারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণায় দিনের তাপমাত্রা সকাল ৬ টায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ছুটি বাড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে শীতের তীব্রতায় ফাঁকা রাস্তা-ঘাট। ছবিটি সোমবার দুপুরে শহরের বটতলা থেকে তোলা। ছবি: আব্দুস সাত্তার

সপ্তাহ জুড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশা এবং দিনভর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শীতের তীব্রতায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

জেলায় দিনের মধ্য বেলায় কখনও কখনও সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে না। শীতার্ত মানুষ দিন-রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিকাল থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে পরদিন সকাল পর্যন্ত একই ধারা অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিন মজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিন ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকটতায় শহরের ব্যস্ততম সড়ক ও গ্রামের হাট বাজারগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এদিকে শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-নিউনোনিয়াসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

অপরদিকে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঠান্ডা জনিত রোগে শনিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে কানাই বাদ্যকর ও বলাই বাদ্যকর নামে পাঁচ মাস বয়সী দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুরা উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর বাদ্যকর পাড়া গ্রামের উপেন্দ্র বাদ্যকর ও মনিকা বাদ্যকর দম্পতির সন্তান।

পারিবারিক সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগে ওই যমজ দুই শিশু ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়। গত কয়েক দিনের ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ায় শিশু দুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। শনিবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, শীত বাড়ায় মানুষ ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শিশুই বেশি। শিশু-বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। শৈত্য প্রবাহ চলাকালে এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠান্ডা এরিয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা ও ধুলোবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শিশুদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ঘরে ঠান্ডা হাওয়া যেন না প্রবেশ করে অভিভাবকদের সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জামাল উদ্দিন জানান, সোমবার সকাল ৬টায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৯ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৬ টার পর দিনের তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মেনে আসে। সকাল ৯টার পর থেকে দিনের তাপমাত্রা উঠানামা করতে থাকে।

তিনি আরও জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। শীত সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের করণীয় বিষয়ে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলে দিনের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামায় মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার বিষয়টি জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক উভয় কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সভায় আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker